• কেউ ছাড় পাবে না, মৃতার পরিবারকে আশ্বাস মমতার 
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: হাহাকার করছেন সন্তানহারা বাবা-মা। কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত। বললেন, ‘আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আপনার ভরসায় রয়েছি। আমরা যেসব কথা বলিনি, সেরকম বহু কথা আমাদের মুখে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ দম্পতির অসহায় হাহাকারে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। পরিবারকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘এই পাশবিক ঘটনায় যুক্ত কেউ ছাড়া পাবে না।’ 

    সোমবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সোদপুরের নাটাগড়ে খুন হয়ে যাওয়া চিকিৎসকের বাড়িতে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন ১টা ২৫মিনিট নাগাদ। প্রায় ৪০ মিনিট পৃথকভাবে তিনি বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বুকফাটা কান্নায় মুখ্যমন্ত্রীরও গলা ধরে আসে। চিকিৎসকের মাকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি গতকালই আসতাম। শ্রাদ্ধশান্তির কাজ হচ্ছে জেনে আর আসিনি।’ মা-বাবার কাছ থেকে তাঁদের মেয়ের সম্পর্কে নানা খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চান তিনি। কোথায় কোথায় পড়েছেন, কোন পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন ইত্যাদি। সন্তানহারা দম্পতি তাঁদের অভিযোগ ও আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। কলকাতার পুলিস কমিশনারকে মুখ্যমন্ত্রী সবকিছু নোট করতে বলেন। 

    চিকিৎসকের বাবা-মা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার আমাদের ফোন করে বলেছিলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা ছুটে যাই। কিন্তু আমাদের দু’ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিল। হেনস্তাও করা হয়। মেয়ের মৃতদেহ দেখতে দেয়নি। আপনি ফোন করার পর সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এই ঘটনার সঙ্গে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসকরা জড়িত। হাসপাতালের চিকিৎসকরা যুক্ত না থাকলে আমার মেয়ের এই ভয়ঙ্কর পরিণতি হতো না।’ পরিকল্পনা করেই নৃশংস অত্যাচারের পর তাঁদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। তাঁদের মেয়ে যে কর্মক্ষেত্রে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, কাজ করতে দেওয়া হতো না—সেই কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘প্রথমদিন আমি যা বলেছিলাম, আজও তাই বলছি। জ্বলন্ত আলো নিভে গিয়েছে। পাশবিক অত্যাচারের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। যাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই ক্রিমিনালদের ফাঁসি চাই।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁর গাড়ি এইচবি টাউন মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় বিজেপির ধর্নামঞ্চ থেকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)