• ধর্মঘটের কমবেশি প্রভাব সর্বত্র, বেলার দিকে পরিস্থিতি সামাল দিলেন সিনিয়র চিকিৎসকরা
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সোমবার দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সর্বভারতীয় সংগঠন ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ইন্ডিয়া এই কর্মবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। এদিন দেখা গেল, কলকাতা সংলগ্ন চার জেলা ও নদীয়ার একাংশে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। সর্বত্রই অল্পবিস্তর ব্যাহত হয়েছে পরিষেবা। বেশিরভাগ হাসপাতালে সকালের দিকে সমস্যা থাকলেও বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। হাল ধরেন সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা। মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বহু মানুষকে। 

    কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বহু রোগীকে ফিরে যেতে হয় এদিন। আউটডোর বন্ধ থাকায় দূর থেকে এসেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি অনেকে। এমনকী, টিকিট কাউন্টারই খোলা হয়নি। ইমার্জেন্সিতেও সকাল থেকে কোনও চিকিৎসককে দেখা যায়নি এখানে। সকাল থেকেই এখানকার ইন্টার্নরা বিক্ষোভ শুরু করেন। অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন। বারাকপুরের বি এন বসু হাসপাতালের আউটডোর সহ সার্বিক পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়েনি। বারাসত হাসপাতালে এদিন চিকিৎসকরা অনেকটা দেরিতে আসেন। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এখানকার চিকিৎসকদের একাংশ রোগী পরিষেবা অব্যাহত রেখেই প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। ডাক্তারি পড়ুয়ারা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে ডেপুটেশন দেওয়ার পর হাসপাতাল চত্বরেই মৌনমিছিলে যোগ দেন। বারাসত শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে আইএমএ বারাসত শাখা। 

    হুগলির চুঁচুড়া ইমামবাড়া, পোলবা, চণ্ডীতলা হাসপাতালে প্রতিবাদে নামেন ডাক্তাররা। বেলার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে ডিউটি করেন। চুঁচুড়া ও চন্দননগরে নার্সরাও বিক্ষোভ দেখান। কল্যাণীর মেডিক্যাল কলেজেও বিক্ষোভ চলে এদিন। আউটডোর বন্ধ থাকায় বহু রোগীকে অসহায়ভাবে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে ইমার্জেন্সি চালু ছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা ভেবে এই হাসপাতালের সমস্ত সিনিয়র চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। চাকদহ হাসপাতালে পরিষেবা অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। হাওড়া জেলা হাসপাতাল সহ দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল, টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালে কর্মবিরতির তেমন কোনও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এই জেলারই উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে সব চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সরাও কর্মবিরতিতে শামিল হন। ফলে পরিষেবা প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। 

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। ক্যানিং হাসপাতাল স্বাভাবিক থাকলেও ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে সকাল থেকে চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। কারণ, আউটডোর তো বটেই, টিকিট কাউন্টারও বন্ধ ছিল। বেলার দিকে সিনিয়র চিকিৎসকরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে এদিন সকালে মাত্র একজন চিকিৎসক ছিলেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আউটডোরেও বসেননি কোনও ডাক্তারবাবু। ফলে রোগীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। কুলতলি, জয়নগর এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালগুলির পরিষেবা সাময়িক ব্যাহত হয় বলে খবর। সেই সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, দক্ষিণের বজবজ, মহেশতলার একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাতের বেলা বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ করতে কড়া সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)