মমতার কাছে মেয়ের খুনের কড়া শাস্তি চাইলেন মা-বাবা
এই সময় | ১৩ আগস্ট ২০২৪
অশীন বিশ্বাস সোদপুর
ফোনে কথা হয়েছিল শুক্রবারই। ঝাড়গ্রাম থেকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্তানহারা দম্পতি তখন আরজি কর হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে, গাড়িতে। খুব শিগগিরই দেখা করবেন বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিন পরে সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী এলেন আরজি করের নিহত তরুণী চিকিৎসকের সোদপুরের বাড়িতে।মমতাকে সামনে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন মা। বলেন, ‘আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম। আপনার ভরসাতেই আছি।’ ঘরে উপস্থিত অনেকের চোখেই তখন জল। গত ক’দিন ধরে সোদপুরের তিন তলা বাড়িটির সামনে মিডিয়ার ভিড়। যদিও ঘরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। এ দিন সিএম আসার খবরে আরও বাড়ে সেই ভিড়— মিডিয়ার পাশে উৎসুক জনতাও।
বেলা পৌনে একটায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঢোকেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া, পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রী সটান দোতলায় যান। সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা ও পরিজন। মমতাকে দেখে সন্তানহারা মা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। মায়ের দু’গাল বেয়ে তখন অবিশ্রান্ত জল। পাশে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছেন বাবা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীও শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। মমতার প্রতি তাঁদের যে ভরসা আছে সে কথা জানান মা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রবিবারই আসতাম। কিন্তু আপনাদের বাড়িতে তো সে দিন মেয়ের শ্রাদ্ধের কাজ ছিল। তাই আর আসিনি।’ মেয়ে কোন স্কুলে পড়ত, কোথা থেকে এমবিবিএস পাশ করেছে সব কিছু খুঁটিয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সামান্য রোজগারে কী ভাবে মেয়েকে কষ্ট করে বড় করেছেন তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান বাবা।
ঘরে তখন পুলিশ-বিধায়ক ও পরিবারের আরও অনেকে দাঁড়িয়ে। মমতা নিহত তরুণীর মা-বাবাকে নিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে যান। আলাদা করে তাঁদের সঙ্গে মিনিট পনেরো কথা বলেন। তারপর সেই ঘরে ডেকে নেন কলকাতার সিপি ও পানিহাটির বিধায়ককে। তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, পুলিশের কী পরিকল্পনা রয়েছে সে সব যেমন মুখ্যমন্ত্রী জানান, তেমনই নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার কোনও সন্দেহ, নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না সে সম্পর্কেও জানতে চান।
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের ফোন পান বলে জানিয়েছেন নিহত তরুণীর মা-বাবা। তিনি ফোনে জানিয়েছিলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সেটা সন্দেহজনক ঠেকেছে মা-বাবা দু’জনেরই। এরপর হাসপাতালে পৌঁছলে তাঁদের দু’ঘণ্টা বসিয়ে রাখার বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। মেয়ের সঙ্গে কিছু সিনিয়র ডাক্তার দুর্ব্যবহার করতেন এবং মেয়ে যে আরজি করে যেতে চাইতেন না সেটাও মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন। মা-বাবার যা কিছু অভিযোগ নোট করে নেন সিপি বিনীত গোয়েল।
সব মিলিয়ে ওই বাড়িতে ৪৫ মিনিট ছিলেন মমতা। বেরোনোর আগে তাঁর কাছে সন্তানহারা দম্পতির আবেদন ছিল, মেয়েকে যারা নৃশংস অত্যাচার করে খুন করল তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যারা যুক্ত তাদেরও কেউ যেন ছাড়া না পায়। মমতা তাঁদের আশ্বস্ত করে বেরিয়ে আসেন।