• দুর্ভোগ এসএসকেএম-এনআরএস-আরজি কর থেকে মেডিক্যালে, সাপে কাটা রোগীকেও ফেরাল হাসপাতাল
    বর্তমান | ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও কলকাতা: এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছেন মহিলা। তাঁর পায়ে একফালি কাপড় গিঁট দিয়ে বাঁধা। সাপে কামড়েছে তাঁকে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শরীর অসাড় হয়ে উঠছে তাঁর। চোখ থেকে থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোদে দরদর করে ঘামছেন। আর তাঁর স্বামী আনিস রহমান হাতজোড় করে অনুরোধ করে চলেছেন, ‘স্যার, আমরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা থেকে এসেছি। দেড় ঘণ্টা আগে এসেছি। দয়া করে ভর্তি করুন। তা না হলে স্ত্রীকে আর বাঁচানো যাবে না।’ শুনেটুনে এক জুনিয়র ডাক্তার অত্যন্ত ‘বিনয়ে’র সঙ্গে বললেন, ‘জরুরি বিভাগে চিকিৎসক নেই। আজ হবে না। অন্য কোথায় যান।’ সাপে কাটা সেই রোগিনীকে ফিরিয়েই দিলেন চিকিৎসকরা! এসএসকেএম শুধু নয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। তার সামনে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সনৎ মাঝি। এসেছেন সেই হুগলি থেকে। পেটে ব্যথা হচ্ছে। সঙ্গে প্রবল শ্বাসকষ্ট। পরিবারের সদস্যরা হাতপাখা দিয়ে ক্রমাগত হাওয়া করে সুস্থ বোধ করানোর চেষ্টা করছেন। তাঁকে কিছুতেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারছেন না। আতঙ্কিত তাঁরা।  আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার জরুরি বিভাগ বন্ধের ডাক দিয়ে অবস্থানে বসেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা। তার জেরে এই দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেল এসএসকেএম থেকে মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর থেকে এনআরএস হাসপাতালে।

    এসএসকেএম থেকে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হল আনিস রহমানকে। কিন্তু মৃতপ্রায় স্ত্রীকে নিয়ে যাবেন কোন হাসপাতালে? সব জায়গাতেই বিক্ষোভ চলছে। আনিসবাবু বললেন, ‘সাপে কাটা রোগী নিয়ে আর কোথায় দৌড়ব, জানি না।’ তবে এদিন সংখ্যায় কম হলেও জরুরি বিভাগে মেডিক্যাল অফিসাররা ছিলেন। কিন্তু তাতে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যায়নি। এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে রোগী গেলেই জুনিয়র ডাক্তাররা বলে দিচ্ছিলেন, ‘আজ ডাক্তার নেই। চলে যান।’ ক্যাম্পাসে তাঁদের বিক্ষোভ দেখে বাধ্য হয়ে ফিরে গেলেন অনেকে।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর, এনআরএসে’র জরুরি বিভাগে মেডিক্যাল অফিসাররা থাকলেও জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেননি। জরুরি বিভাগের বাইরে তাঁরা অবস্থান করেন। ফলে আউটডোরেও দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। মেডিক্যাল কলেজে অস্থি বিভাগে এসেছিলেন লতিফ রহমান। বাড়ি বসিরহাটে। ভিড় হয় বলে সকাল ছ’টায় চলে এসেছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইন দিয়ে শেষপর্যন্ত ফিরে যান। যাওয়ার সময় বললেন, ‘আমরা কী দোষ করলাম, স্যার?’ এনআরএসে গভীর উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পম্পা দাস। পেটে জল জমার সমস্যায় এক আত্মীয়কে নিয়ে এসেছিলেন। ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরে যেতে হল তাঁকে। আর জি করে ভাঙা পা নিয়ে জরুরি বিভাগে এসেছিলেন মুন্নেহার বেগম। জিরানগাছার বাসিন্দা। তাঁকেও ভর্তি নেওয়া হয়নি। এখানে ভর্তি হতে পারেননি বারাসতের মনোয়ারা বিবি। তিনি সিওপিডি’র রোগী। প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছিলেন। পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল ছাড়লেন। এদিন আর জি করে ইউএসজি’র ডেট ছিল গর্ভবতী শ্যামলী পালের। মধ্যমগ্রাম থেকে এসেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে তাঁরা শুনলেন, ‘আজ কিছু হবে না। অন্য জায়গায় যান’। আর জি করে দাঁড়িয়ে গোবিন্দ সিকদারের মেয়ে বললেন, ‘বুকের সমস্যা নিয়ে বাবা ভর্তি। এখন ছেলেদের ওয়ার্ডে রাতে কোনও আয়াও পাচ্ছি না। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)