রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত ‘স্বাধীনতা সড়ক’-এর ভবিষ্যৎ। যা নিয়ে হতাশ নদিয়ার চাপড়া থানার হৃদয়পুরবাসী। সব ঠিকঠাক থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যেই চালু হয়ে যেত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চাপড়ার হৃদয়পুরে দুদেশের এন্ট্রি-এগজিট পয়েন্ট। যার পোশাকি নাম স্বাধীনতা সড়ক। কিন্তু বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক পালাবদলের ফলে এই এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
চাপড়ার হৃদয়পুর সীমান্ত পার হলেই ওপারে বাংলাদেশের মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ওই এলাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার ঘোষণা করা হয়। তার নাম দেওয়া হয় মুজিবনগর সরকার। এই সীমান্তবর্তী এলাকাকে স্মরণীয় করে রাখতে সেখানে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের নতুন দরজা (দুদেশের এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্ট) তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছিল দিল্লি ও ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়েছিল, চাপড়া থেকে হৃদয়পুর হয়ে মুজিবনগর পর্যন্ত ওই ঐতিহাসিক রাস্তাটির নামকরণ করা হবে ‘স্বাধীনতা সড়ক’।
গত বছর ১৮ই মে স্বাধীনতা সড়ক ও এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্টের কাজের তদারকির জন্য ওই এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্ডালিভ ইলিয়াস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু-সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আমলারা। বাংলাদেশের দিকে স্বাধীনতা সড়ক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। ভারতের দিকে সেই কাজ চলছে জোরকদমে। হৃদয়পুর থেকে চাপড়া পর্যন্ত চলছে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ।
চেকপোস্ট চালু হলে দুই দেশের মানুষের যাতায়াত ও যোগাযোগ একদিকে যেমন সহজ হবে একই সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের রোজগারের পাশাপাশি সার্বিক উন্নতিও বৃদ্ধি পাবে। সেই আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন এলাকাবাসী। রাতারাতি বেড়ে গিয়েছিল ওই এলাকায় জমির দাম। অনেক ব্যবসার জন্য চড়া দামে জমি কিনে নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের অশান্তির জেরে অনিশ্চয়তার মেঘ হৃদয়পুরের আকাশে। ফের কবে শান্ত হবে বাংলাদেশ, কবে দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে চালু হবে স্বাধীনতা সড়ক, সেদিনের অপেক্ষায় হৃদয়পুরবাসী।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অত্যাচার! ওড়িশা থেকে ফিরলেন মুর্শিদাবাদের ৩৫ জন শ্রমিক]
ওই গ্রামের বাসিন্দা সনজিৎ মন্ডলের কথায়, রাস্তা তৈরির বাড়িঘর ভাঙ্গা হয়ে গিয়েছে, চলছে কাজ। এর মধ্যেই বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। নতুন সরকার আসলে যদি চুক্তি না মানে তাহলে কি হবে সেই নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। সুরত আলি শেখের কথায় এখানে এন্টি-এক্সিট পয়েন্ট হলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ত, দ্রুত যেমন বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়া যেত ঠিক তেমনি এলাকার উন্নয়ন হত। বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আগামিদিনে বাংলাদেশ সরকার কী করবে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সকলে।