• চণ্ডীপুরে ভয়াবহ ডাকাতি, মা, মেয়েকে বেদম মার
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সোমবার রাতে চণ্ডীপুর থানার কালিকাখালি গ্রামে গৃহস্থের বাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটল। প্রায় ১০বছর আগে গৃহকর্তা প্রদীপ দাসের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী মনিকা দাস এবং ছোট মেয়ে থাকেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রাত ১২টা ১৫মিনিট নাগাদ চারজন ডাকাতের একটি দল ওই বাড়ির রান্নাঘরের অ্যাসবেসটসের ছাউনি ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তারপর গ্রিলের দরজায় তালা ভেঙে মূল ঘরে ঢুকে পড়ে। মা-মেয়েকে নির্মমভাবে পিটিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেয়। লোহার রড, সাঁড়াশি দিয়ে মনিকাদেবীর মেয়েকে নৃশংসভাবে পেটানো হয়েছে। মুখ ফেটে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। এড়াশাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই কিশোরীকে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

    রাতে বাড়ির ভিতর আওয়াজ শুনে উঠে পড়েন মনিকাদেবী ও তাঁর ছোট মেয়ে প্রীতি। এবার প্রীতি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। আলো জ্বালাতেই মা-মেয়ে দেখেন, চারজন দুষ্কৃতী বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েছে। অ্যাসবেসটসের ছাউনি ভেঙে প্রথমে রান্নাঘরে ঢোকে। তারপর গ্রিলের দরজায় তালা কেটে মূল ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে ডাকাত দল। হাতে ভোজালি, বড় সাঁড়াশি এবং লোহার রড ছিল। মা-মেয়ে চিৎকার করতেই মনিকাদেবীর ঘাড় জাপ্টে ধরে ডাকাতরা। টাকা ও সোনা কোথায় রাখা আছে জানতে চায় দুষ্কৃতীরা।

    মাত্র ২২দিন আগে মনিকাদেবীর অপারেশন হয়েছে। শরীর বেশ দুর্বল। দুষ্কৃতীরা তাঁর ঘাড় জাপ্টে ধরতেই মেয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিৎকার করে। দুষ্কৃতীরা মা ও মেয়ে দু’জনকেই মারধর করে। সাঁড়াশি দিয়ে ওই ছাত্রীর মাথায় মারে। রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মুখে, মাথায় মারা হয়। পীঠে, পায়ে লোহার রড দিয়ে মারার ফলে কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে মনিকাদেবী হাতের সোনার চুড়ি, কানের দুল এবং বাড়িতে থাকা প্রায় ২০হাজার টাকা তুলে দেন। সোমবারই ব্যাঙ্ক থেকে নগদ ১০হাজার টাকা তুলেছিলেন। দুষ্কৃতীরা সর্বস্ব লুট করে পালানোর সময় মনিকাদেবী তাদের পায়ে ধরে ফেলেন। হাতজোড় করে বলেন, মেয়েটাকে টোটোয় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাই অন্তত ৫০০টাকা দাও। ওই কথা শুনে দুষ্কৃতীরা লুট করা টাকা থেকে ২০০টাকা বের করে তাঁর হাতে তুলে দেয়।

    দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কের ধারেই মনিকাদেবীর বড় দোতলা বাড়ি। বাড়ির একদিকে, মনিকাদেবী ও তাঁর মেয়ে থাকেন। আর একদিকে তাঁর ভাসুর অশোক দাসের পরিবার থাকে। রাত ১২টা ১৫মিনিট থেকে প্রায় দু’টা পর্যন্ত বাড়িতে অপারেশন চলে। ওই ঘটনার পর মনিকাদেবী বৃদ্ধ অশোকবাবুর ঘরে গিয়ে সবটা জানান। তারপর ফোনে একজন টোটোচালককে ডেকে ভোরে মেয়েকে এড়াশাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

    মনিকাদেবী বলেন, আমার সামনে মেয়েটাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। নগদ টাকা ও সোনা সব ওদের হাতে দিয়েছি। মেয়েটার চিকিৎসার জন্য ওরা আমার টাকা থে঩কেই ২০০টাকা দিয়েছে। আমি ওই দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। চণ্ডীপুর থানার ওসি দীপক অধিকারী বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)