• সবনপুরে অবৈধ কয়লা উত্তোলন, সঙ্কটে কল্যাণেশ্বরী মন্দির
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কুলটি থানার সবনপুরেই ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পুরনো মা কল্যাণেশ্বরী মন্দির। গড় জঙ্গল থেকে কাশিপুর রাজবাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে এখানেই নাকি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মা নিজেই। ভক্তদের বিশ্বাস, এলাকার রমা সায়রে মা এখনও স্নান করেন। কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি। ধর্মীয় স্থান বলে খ্যাতির শীর্ষে থাকা সেই সবনপুরই এলাকায় অবৈধ কয়লা লুটের মুক্তাঞ্চল। একের পর এক কুয়ো খাদ করে, ইট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই দিনরাত কয়লা তোলা হচ্ছে। মায়ের মন্দির লাগোয়া রাস্তা দিয়ে সেই কয়লা বোঝাই করে ট্রাক্টর চলে যাচ্ছে অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে। কখনও মন্দিরের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক্টরগুলি। ভক্ত থেকে সেবা‌‌ইত বিপাকে পড়ছেন সকলেই। কিন্তু মাফিয়াদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না কেউই। ফল যা হওয়ার তাই। বিপন্ন মন্দির। বিপন্ন জাতীয় সড়কও। কলকাতা-দিল্লির সংযোগকারী জাতীয় সড়কের মাত্র ৫০ মিটার দূরে ভূগর্ভ থেকে নির্বিচারে কয়লা কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাতে জাতীয় সড়ক ধসে যাওয়া আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি নজরেও এনেছেন তাঁরা। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি। কোনও পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।   জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

    আসানসোল পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সবনপুর এলাকায় গেলেই অজস্র বাঁধানো কুয়ো দেখা যায়। একলপ্তে ২৬টি কুয়ো ছড়িয়ে রয়েছে। ইট দিয়ে বাঁধানো সেই কুয়ো গুলি থেকে জল ওঠে না। তোলা হয় কয়লা। কুয়ো খাদ দিয়ে কয়লা কাটুয়ারা নেমে পড়েন। কয়লার স্তর পেতে তা কাটতে কাটতেই মাটির ভেতরে ঢুকতে থাকেন তাঁরা। এভাবে কতটা যে ভেতরে ঢুকে যান, তার কোনও হিসেব থাকে না। এমনকী মাফিয়ারাও জানতে পারে না।  এখানেই মূল আশঙ্কা। যেভাবে জাতীয় সড়কের পাশে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ খনন হচ্ছে, তাতে মাটি আলগা হয়ে ধসে যাবে না তো দু’ নম্বর জাতীয় সড়ক! এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের অভিযোগপত্র দেখিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা এই আশঙ্কর কথা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’

    পুরো এলাকাটিতে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব রয়েছে কোল ইন্ডিয়ার সংস্থা বিসিসিএল। পাশেই তাদের দামাগোড়িয়া কোলিয়ারি। বাসিন্দাদের দাবি, চুরির বিষয়টি জানানো হয় বিসিসিএলে কর্তৃপক্ষকেও। লিখিত সেই চিঠির উত্তরও গ্রামবাসীদের দিয়েছিল বিসিসিএল। তাঁরা জানিয়েছিল, অভিযোগ পাওয়ার পরই থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তৎপর্যপূর্ণ বিষয়, কিছুদিন আগে বিসিসিএল ওই এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে সার্ভে করে। সার্ভের খবর মাফিয়াদের কাছে আগেই চলে আসে। সেই সময়ে লুটের কারবার বন্ধ রেখে কুয়ো খাদ গুলিকে নানা সামগ্রী দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়। 

    এই অবৈধ কয়লা খননে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের ভক্ত ও সেবা‌ইতরা। বহু প্রাচীন এই মন্দিরকে অন্যত্র স্থানান্তর করা অসম্ভব। অন্যদিকে মাফিয়া ও কারবারিদের দাপটে যেকোন দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। শুধু যে মন্দির সংলগ্ন কয়লা কাটা হচ্ছে তাই নয়, মন্দিরের রাস্তাটিই অবৈধ কয়লা কারবারের করিডর। এই রাস্তা ধরেই ট্রাক্টরগুলি জাতীয় সড়ক হয়ে গিয়ে উঠছে জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি হোটেলে। যেটি কয়লা মাফিয়াদের ‘সেন্ট্রাল অফিস’। কুলটি থানার চৌরঙ্গী ফাঁড়ির অদূরেই রয়েছে পরিবহণ  দপ্তরের এমভিআই অফিস। সেখানে দিনরাত গাড়ি চেকিং চলছে। অথচ, সেখানে জাতীয় সড়কে দিনে দুপুরে কয়লা বোঝাই ট্রাক্টর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।  কারও নজরে পড়ছে না!   চলছে কয়লা পাচার।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)