স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়ালে হনুমান মন্দির, অভিযোগের তিরে বিদ্ধ বজরং দল
বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার সরকারি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবার গেরুয়াকরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল বজরং দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, নবরূপে নির্মিত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়াল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে মন্দির। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাথায় লাগানো হয়েছে গেরুয়া ঝান্ডা। যা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
পুরুলিয়া পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের ভাটবাঁধের নাথুডিপাড়ার এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দীর্ঘদিনের। সংস্কারের অভাবে তা ধুঁকছিল। করোনার সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এটি চালুর জন্য বারবার স্থানীয় কাউন্সিলার থেকে শুরু করে পুরসভায় দাবি জানাতে থাকেন বাসিন্দারা। যদিও পুরসভা বিশেষ উদ্যোগী হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিত্যক্ত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গেরুয়া শিবিরের কিছু উঠতি যুবকের কব্জায় চলে যায়। তারা সেখানে নেশার আসরও বসাত। এনিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই যুবকদের চোখ রাঙানির মুখে পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলতি বছর হোলির আগে ওই এলাকায় একটি হনুমান মারা যায়। হনুমানটিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনেই সমাধিস্ত করে ওই যুবকরা। সেখানে একটি অস্থায়ী বেদীও তৈরি করা হয়। বিষয়টি পুরসভাকে জানানো হয়। এরপরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংস্কারে উদ্যোগী হয় পুরসভা। সংস্কারের কাজ শেষ হলে পুরসভা যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার তোড়জোড় করছে, তখনই তার সামনে হনুমান মন্দিরের কংক্রিটের বেদী তৈরি করে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়ালে গেরুয়া ঝান্ডা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এনিয়ে ফের প্রশাসনের আধিকারিকদের দ্বারস্থ হন বাসিন্দারা। অভিযোগ পৌঁছয় স্বাস্থ্যদপ্তরেও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান বা জৈন, কোনও বিশেষ একটি ধর্মের প্রতিনিধিদের জন্য নয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে প্রত্যেক নাগরিকের। সেখানে একটি বিশেষ ধর্মের ঝান্ডা উড়বে, তা আমরা বরদাস্ত করব না। এরপরেই তিনি এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পুরুলিয়ার মহকুমা শাসক, পুরসভার চেয়ারম্যানকে বলেন।
পুরসভার চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালির অভিযোগ, সরকারি জায়গা সহ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে দখল করতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে স্থানীয় বজরং দলের কিছু সদস্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য কেন্দ্র দখল করে সেখানে মন্দির তৈরি করা। কিন্তু পুরুলিয়ার বুকে আমরা এধরনের কোনও সাম্প্রদায়িক কাজকর্ম বরদাস্ত করব না। চেয়ারম্যানের সংযোজন, মঙ্গলবারই আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে চালু করে দিয়েছি।
এনিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙা বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মন্দির থাকলে সমস্যা কোথায়? সেটা তো মানুষের প্রার্থনার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। অসুবিধার তো কিছু দেখছি না। আসলে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। এসএফআইয়ের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাত বলেন, গত কয়েক বছরে পুরুলিয়ায় যেভাবে একের পর এক হনুমান মন্দির গজিয়ে উঠেছে তা লক্ষণীয়। আসলে তৃণমূলই বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তোল্লাই দিচ্ছে।