• রোগী হয়রানি নয়: হাইকোর্ট,  আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগে, মঙ্গলবারই আর জি কর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে রোগী হয়রানি বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত বলেছে, ‘ঘটনার অভিঘাতে চিকিৎসকদের এই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ স্বাভাবিক। তবে এই পবিত্র পেশায় রোগীদের প্রতি চিকিৎসকরা দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। বিশেষত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কথা তাঁদের ভাবতেই হবে।’ তাই আদালতের আবেদন, রোগীদের কথা ভেবে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসুন। 

    আর জি করের ঘটনায় আগেই পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। এরপর এদিন সকালে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতার বাবা-মা। দিনভর সবক’টি মামলার শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে সিবিআইকে এই ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করতে হবে। আজ, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে মামলার সব নথি সিবিআই আধিকারিকদের হস্তান্তর করবে পুলিস। কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চলবে। নির্দেশে আদালত আরও বলেছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তদন্ত করবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে বেঞ্চ। এছাড়াও আর জি করের পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য সরকার ও হাসপাতাল সুপারকে পৃথক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। 

    গোটা ঘটনায় আর জি করের পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকায় এদিন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। কেন পদত্যাগ করার চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে অন্য কলেজে একই পদে দায়িত্ব দেওয়া হল? এই প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘তিনি কি এতটাই প্রভাবশালী যে, তাঁকে এভাবে পুরস্কৃত করা হল?’ প্রধান বিচারপতি সাফ জানিয়ে দেন, ‘বিকেল ৩টে পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে অধ্যক্ষকে স্বেচ্ছায় ছুটিতে চলে যেতে বলুন। না হলে আমরা ছুটিতে পাঠিয়ে দেব।’ এরপরই ১৫ দিনের জন্য ছুটির আবেদন জানান সন্দীপ। 

    এছাড়াও ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করার অভিযোগ তোলেন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিল্বদল ভট্টাচার্য, কৌস্তভ বাগচী ও ফিরোজ এডুলজিরা। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে তদন্তের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গ তোলা হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা কি রাস্তায় দেহ খুঁজে পেয়েছিলেন, যে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করলেন? কেন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হল না? অধ্যক্ষ কেন পুলিসে অভিযোগ জানালেন না? ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও  কেন পুলিস অধ্যক্ষর বয়ান রেকর্ড করল না?’

    এদিকে, নির্দেশের পরই টালা থানায় যান সিবিআইয়ের অফিসাররা। ইতিমধ্যেই তাদের তরফে এফআইআর রুজু হয়েছে। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে আজই বিশেষ দল রাজ্যে এসে ঘটনাস্থল ও মৃতার বাড়ি যাবে। এদিন হুগলিতে এক দলীয় কর্মসূচিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতাল চত্বরে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের ধর্না, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি রুখতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে নয়াদিল্লি এইমস। 
  • Link to this news (বর্তমান)