• লাগাতার তোলাবাজি, থানায় সালিশি সঞ্জয়ের
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় দুর্গাপূজো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে শহরের বিভিন্ন থানা থেকে ‘তোলা’ আদায় করত। লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে থানার আধিকারিক পর্যন্ত কাকে কত টাকা ‘তোলা’ বাবদ দিতে হবে, রীতিমতো ছাপানো চার্টও ছিল। শুধু এই কাজই নয়, কলকাতা পুলিস ওয়েলফেয়ার কমিটিতে ক্ষমতা হারানো এক নেতার কথামতো বিভিন্ন ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তোলাবাজিও করত অভিযুক্ত। এমন অভিযোগ সামনে আসার পর রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। ওয়েলফেয়ার কমিটির সাম্রাজ্য হারানো ওই পুলিস আধিকারিকের নিয়ন্ত্রণে থাকা থানাগুলিতে অভিযোগকারীকে ডেকে সঞ্জয় সালিশিও করেছে বলে জানা যাচ্ছে। 

    পুলিস সূত্রে খবর, ডিএমজিতে কাজ করতে গেলে অগ্নিনির্বাপণ বা সাঁতার জানার সার্টিফিকেট প্রয়োজন। জানা যাচ্ছে, এই ধরনের কোনও সার্টিফিকেটই ছিল না অভিযুক্তের। অথচ ডিএমজি’তে ঠাঁই হয়েছিল। সিভিকের চাকরিতে যোগ দিয়ে সে কমিটিতে ক্ষমতা খর্ব হওয়া ওই পুলিস নেতার অত্যন্ত কাছের পাত্র হয়ে ওঠে। তাঁকে গুরু বলে মানতে শুরু করে। ‘গুরু’র নাম করে পুলিস কর্মীদের সঞ্জয় বলত, পছন্দসই জায়গায় পোস্টিং করিয়ে দেব। এই আশ্বাস দিয়ে মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এই সিভিকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নেতার বিরোধী বলে পরিচিত বিভিন্ন পুলিস কর্মীদের ভয় দেখিয়ে সঞ্জয় বলত তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। মামলা হাল্কা করার জন্য তারা টাকা খেয়েছেন। এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট পুলিস কর্মীদের কাছ থেকে সঞ্জয় তোলাবাজি করতেন বলে জানা যাচ্ছে। আধিকারিকরা জানতে পারছেন, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওয়েলফেয়ার কমিটির তরফে প্রতিবছর দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। কমিটিতে কোণঠাসা ওই কর্তাই একসময়ে পূজো দেখভাল করতেন। বিভিন্ন থানার ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর এবং কর্তাদের কত টাকা দিতে হবে তার রেট বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। ছাপানো ওই লিফলেট তিনি পাঠিয়ে দিতেন। কর্তার নির্দেশমতো এই টাকা সংগ্রহ করতে যেত সঞ্জয়। এই সুবাদে তার সঙ্গে থানার বেশকিছু অফিসারের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তাঁদের থেকে বিভিন্ন সুযোগসুবিধাও সে  নিতে শুরু করে।  

    আধিকারিকরা জানতে পারছেন, কোণঠাসা ওই পুলিস নেতা সঞ্জয়কে নির্দেশ দেয়, কোন কোন এলাকায় অবৈধ কাজকর্ম চলছে সেই সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে। সেইমতো সঞ্জয় এলাকায় ঘুরে জুয়া, সাট্টা বেআইনি মদের ঠেক,মধুচক্র কোথায় চলছে তার খবরাখবর জোগাড় শুরু করে। তারপর সেই সব ঠেকের ‘পরিচালক’দের ভয় দেখিয়ে তোলাবাজি শুরু করে বলে অভিযোগ। তাদের কাছে সে নিজেকে পুলিস বলে পরিচয় দিত। দাবিমতো টাকা না দিলে কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিত এই সিভিক। এমনকী অবৈধ কাজে জড়িতদের নেতার নির্দেশমতো তুলে এনে সালিশি করে টাকা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ। সূত্রের খবর, ক্ষমতা হারানো ওই নেতা সঞ্জয়কে নির্দেশ দিয়েছিল বিভিন্ন সমস্যায় থাকা ব্যবসায়ী বা কারবারি ধরতে। নেতার কথামতো এই ধরনের লোক খুঁজে বের করত অভিযুক্ত। তাঁদের সমস্যা সমাধান করার নাম করে সঞ্জয় লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজি করেছে বলে অভিযোগ। এভাবে কত টাকা রোজগার করেছে অভিযুক্ত, তার হিসেব চলছে। এই টাকায় তিনি কোথায় কত সম্পত্তি, ফ্ল্যাট কিনেছেন, সেই খোঁজখবর করা হচ্ছে বলে খবর।   
  • Link to this news (বর্তমান)