• তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পরই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা
    বর্তমান | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের পর ঘটনাস্থল থেকে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছিল। ঘটনার কথা জানার পর সেমিনার হলে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করেছিলেন। তরুণীর চিকিৎসকের পরনের পোশাক ও সেখানে পড়ে থাকা বিভিন্ন জিনিসে হাত দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিসি তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছিল বলে খবর।

    প্রমাণ আরও জোরালো হয়েছে ঘটনার পরপরই সেমিনার হলের সামনের দেওয়ালটি শৌচালয় তৈরির জন্য ভেঙে ফেলায়। মঙ্গলবার জাতীয় মহিলা কমিশন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তাদের বিষয়টি নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তদন্ত চলার সময় কীভাবে তার অনুমতি মিলল, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে হাসপাতালের এক কর্তার বিরুদ্ধে। সিবিআই তদন্তভার নেওয়ায় ওই আধিকারিককে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

    তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত সিভিক অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছিল। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আবার ভোর চারটে নাগাদ আসে। সিসি ক্যামেরায় তা ধরা পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অভিযুক্ত জেরায় পুলিসকে জানিয়েছে, ওটিতে তার পরিচিত একজন রয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কিন্তু ভোরবেলা কেন এসেছিল, সেই প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা সে দিতে পারেনি।  

    জানা যাচ্ছে, তরুণীর মৃত্যুর পর আর জি কর হাসপাতালে যায় পুলিস। সেমিনার হলে ঢুকে বুঝতে পারে সেখানে ঢোকা ও বেরনো চলেছে।  এমনকী মহিলার কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিস টেনে সরানো হয়েছে। ঘটনার কথা জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন ঘটনাস্থল ঘিরে দিল না, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর ইন্টার্নের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। তারা হাসপাতালের ক্ষমতাশালী কর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি গোটা বিষয়টি দেখে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। 

    সূত্রের খবর, এরপর ওই কর্তা সেমিনার হলে গিয়েছিলেন দেহ দেখতে। সেখান থেকে ফিরে এসে হাসপাতালের অন্য এক আধিকারিককে নির্দেশ দেন চিকিৎসকের পরিবারকে জানিয়ে দিতে তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন। এর প্রতিবাদ করেছিলেন এক চিকিৎসক। তিনি বলার চেষ্টা করেছিলেন, তরুণী অর্ধনগ্ন ছিলেন এবং পোশাক অবিন্যস্ত হওয়ার পরেও এটি কী করে আত্মহত্যা বলা যায়! ওই কর্তা বিষয়টি পাত্তা দেননি। কর্তার নির্দেশমতোই তরুণীর পরিবারকে ফোন করেন এক আধিকারিক। তাঁর পরিবারকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার পিছনেও যে ওই কর্তার বিশেষ ভূমিকা ছিল, তা স্পষ্ট হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মৃতার বাবা-মাকে বসিয়ে রেখে সেমিনার হলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার কাজ চলছিল। একইসঙ্গে হাসপাতালের ওই কর্তা ঘটনার পর কাদের ফোন করেছিলেন, তার তথ্য তদন্তকারীরা পেয়ে গিয়েছিলেন। এদিন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালের সুরক্ষায় জোর দিতে বলেছেন।   
  • Link to this news (বর্তমান)