কলকাতায় বাতাসের দূষণ কমাতে পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর কথা ক’দিন আগেই বলেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই তালিকায় জোর দেওয়া হয়েছিল মূলত নিম ও দেবদারুর উপর। কিন্তু নিম গাছ লাগাতেই ‘ভয়’ পাচ্ছেন পুরসভার উদ্যান বিভাগের আধিকারিকরা। কারণ, গাছ তো লাগানো হলো। তারপরে? গাছ একটু বড় হতে না-হতেই তো তার ডাল ও পাতা লোকজন ছিঁড়ে নিয়ে চলে যাবে।তখন দেখবে কে? আর পাড়ায় পাড়ায় বা শহরের রাস্তায় নিম গাছ লাগানো হলে এত গাছ পাহারাই বা দেবে কে? নিম গাছের উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার মতো পরিকাঠামো তো নেই পুরসভার। সেজন্য আপাতত নিম ছেড়ে দেবদারুর উপরই ভরসা রাখছেন তাঁরা। উদ্যান বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, দেবদারুও অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব গাছ। তার ডালপালা বিশেষ থাকে না, অথচ প্রচুর পাতা থাকে।
ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে গেলে খুব দ্রুত সরানোও যায়। ডালপালার সমস্যা না থাকায়, বিদ্যুৎ বা টেলিফোন বা কেবলের তার জড়িয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও খুব কম। তাছাড়া দেবদারু চারা লাগানোর পরে তা দ্রুত বাড়ে। খুব একটা নজরদারির বিষয়ও থাকে না। ফলে দেবদারু গাছ লাগানো হলে ঝক্কি অনেকটাই কম বলে মত উদ্যান বিভাগের আধিকারিকদের।
উল্টোদিকে, তাঁদের বক্তব্য, নিম উপকারী এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে নিম গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। যেহেতু নিমের ডাল-পাতা অত্যন্ত উপকারী, তাই গাছ একটু বড় হলেই তার ডাল, পাতা লোকজন ছিঁড়ে নিয়ে চলে যায়। তাছাড়া নিম গাছ দেবদারুর তুলনায় ধীর গতিতে বাড়ে। বেড়ে ওঠার পর তার ডালপালাও অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রসারিত হয়।
শহরের বহু এলাকায় রাস্তার পাশে অতটা জায়গা থাকে না। তখন ওই গাছ নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয়। তবে যতই সমস্যা হোক, উপকারী গাছ হিসেবে নিমের যে কোনও বিকল্প নেই সে কথাও মানছেন উদ্যান বিভাগের আধিকারিকরা। ওই বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘বছর কয়েক আগে মধ্য কলকাতার কয়েকটা জায়গায় রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটা নিমের চারা লাগানো হয়েছিল। আমরা গাছগুলির উপরে নজরও রাখছিলাম। কিন্তু গাছগুলি একটু বড় হওয়ার পরেই দেখি, তার ডাল-পাতা ছিঁড়ে প্রায় নেড়া করে ফেলা হয়েছে। গাছের ডাল এমন ভাবে ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যে অনেক গাছই পরে আর বাঁচানোর কোনও উপায় ছিল না।’
ওই আধিকারিকের কথায়, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই সব নিম গাছের পাতা আর ডাল ভেঙে জানবাজারের মোড়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তবে তখন আর কিছু করার নেই।’