• অব্যাহত রোগীদের ভোগান্তি, সর্বস্তরেই কাজে ফেরার আর্জি
    এই সময় | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: আরজি করের ঘটনায় কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে চিকিৎসকদের আন্দোলন জেলায় ছড়ানোয় রোগীদের দুর্ভোগ শুরু হয়েছিল আগেই। সোমবার থেকে সেই আন্দোলন কার্যত দেশজুড়ে ছড়িয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি শুরু করায় বেশির ভাগ হাসপাতালে আউটডোরে রোগী দেখা বস্তুত বন্ধ। ফলে রোগীদের ভোগান্তিও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে আউটডোর থেকে ফিরতে হওয়ায় উত্তরপ্রদেশের লখনৌয়ের একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার ভাঙচুরও চালান রোগী-পরিজনেরা। অন্য দিকে, আন্দোলনের জেরে পরিষেবা মিলবে না ধরে নিয়েই রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে রোগী আসা অনেকটা কমেছে বলে খবর। এই অবস্থায় রোগীদের কথা ভেবে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

    আরজি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে একই আবেদন রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টও। আরজি করের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতা ও জেলার সব মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। বহির্বিভাগের চিকিৎসা বিপর্যস্ত হয়েছে। জরুরি বিভাগেও চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা।

    এর মধ্যে কিছু হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে স্বাভাবিক পরিষেবা শুরু হলেও জুনিয়র ডাক্তারদের চাপে তা মাঝপথে বন্ধ করতে হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে পৌঁছে আতান্তরে পড়েন রোগী এবং তাঁদের পরিজন। এরই মধ্যে এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তিনি জানান, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনের কথা হয়েছে। আবাসিক চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে বহির্বিভাগ ও জরুরি পরিষেবা রাজ্যজুড়ে ব্যাহত হচ্ছে।

    তাই আন্দোলনকারীদের পরিষেবা স্বাভাবিক করার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হোক।’ তিনি জানান, দু’লক্ষের উপর রোগী বহির্বিভাগে পরিষেবা পান প্রতিদিন। এক লক্ষ টেলিমেডিসিন পরিষেবা হয়। ১২-১৫ হাজার রোগী দৈনিক ভর্তি হন। সেগুলি স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।

    নবান্নের তরফেও জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চিকিৎসকদের বুঝিয়ে যাতে পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে হাইকোর্টও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতি আবেদনে বলেছে, ‘যে পরিস্থিতিতে আপনারা আন্দোলন করছেন, তাতে আপনাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি আছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা পেতে আসেন। তাই আপনাদের যা দাবি, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন। তবে কাজে ফিরে আসুন।’

    রাজ্যকেও চিকিৎসকদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে বলেছে হাইকোর্ট। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের তরফেও চিকিৎসকেরা যাতে কাজে ফেরেন, সেই আবেদন করা হয়েছে। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহারের খবর নেই। বরং পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ আজ, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিকে নন-ইমার্জেন্সি রোগী দেখা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে। ফলে, আজও প্রবল দুর্ভোগের আশঙ্কা।

    এ দিন বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকেরা এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে আউটডোরে কোনও পরিষেবা মেলেনি। হাওড়ার হাসপাতালগুলিতেও কর্মবিরতি চলে। হুগলির চুঁচুড়ার ইমামবারা হাসপাতালে আউটডোর পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ফিরতে হয় অসংখ্য রোগীকে।

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অউটডোরের পাশাপাশি ইমার্জেন্সিতেও ডিউটি করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সকাল থেকে আউটডোরে চিকিৎসার জন্যে রোগীদের টিকিট দেওয়া শুরু হলেও পরে কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার এসে কাউন্টার বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। বিপাকে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। একই অবস্থা হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজেও। প্রভাব পড়ে ইন্ডোর পরিষেবাতেও।
  • Link to this news (এই সময়)