• রাতের শহর বুঝে নেবেন মহিলারা, মাঝরাতে রাজপথ আজ ওঁদের দখলে
    এই সময় | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: টানা ডিউটির পরে মাঝরাতে চোখ বন্ধ করে নিজের হাসপাতালে সামান্য বিশ্রাম খুঁজছিলেন মেয়েটি। সেই চোখ আর খোলেনি তাঁর। তা হলে কি নিজের কর্মস্থলে রাতে আর নিরাপদ নন মহিলা কর্মীরা? তরুণী-চিকিৎসকের জীবন ও সম্ভ্রমহানি এ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতিবাদে উত্তাল চিকিৎসক থেকে আমজনতা। এরই মধ্যে অভিনব প্রতিবাদের রাস্তা নিলেন মহিলারা।আহ্বান সাদামাটা- ‘মেয়েরা, রাত দখল কর- দ্য নাইট ইস আওয়ার্স।’ সময় বাছা হয়েছে স্বাধীনতার মধ্যরাত। ১৪ অগস্ট, মাঝ রাতে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল শহরের তিন স্থান কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর আর অ্যাকাডেমি চত্বরে। কিন্তু এই আহ্বানে উত্তাল হয়েছে নেটপাড়া। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে তিলোত্তমার গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই ডাক পৌঁছে গিয়েছে শহরতলি থেকে জেলাতেও। ফলে আজ বুধবার, এক অন্যরকম আন্দোলনের সাক্ষী হতে চলেছে বাংলা।

    শুরুটা যদিও হয়েছিল কলকাতার তিনটি জায়গা দিয়ে, কিন্তু মঙ্গলবার রাতে দেখা গিয়েছে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে। জুড়ছে নতুন নতুন নাম। কলকাতার উত্তর-দক্ষিণের সঙ্গে শহরের পূর্বেও জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। বীরভূমের শান্তিনিকেতনের বার্তা, ‘দেখা হবে রাস্তায়’, নদিয়ার রানাঘাট জানাচ্ছে ‘সঙ্গে আছি’।

    উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের ঘড়ির মোড়ে মঙ্গল-রাত থেকেই সাজো সাজো রব, পিছিয়ে নেই বহরমপুরের ঐতিহাসিক স্কোয়ার ফিল্ড। মালদার ইংলিশ বাজার কিংবা সমাজমাধ্যমে একই আহ্বান বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বরেও। কোনও কোনও শহরে একাধিক জমায়েতেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। রাতে দেখা গিয়েছে, তালিকায় বাদ নেই কোনও জেলা-ই।

    রাতের রাস্তায় মেয়েদের জমায়েত নিয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায়, কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্ররা ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন৷ শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বস্তিকা লেখেন, ‘এই শহর আমাদের। এই দেশও আমাদের। সবাই আসুন। যে যেখানে পারবেন আসুন। নিজের এলাকায় জড়ো হোন। নিজের পাড়ায় জড়ো হোন। ওদের জানান৷ এই রাস্তা আমাদেরও।’

    অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মেয়েদের জন্য অন্যরকম রাতের কল্পনা করেছেন৷ নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এটা যেন সত্যি হয়...।’ এই আন্দোলনকে সমর্থন করে বার্তা দিয়েছেন পুরুষরাও। অনেকেই জানিয়েছেন, এই আন্দোলনে সামিল হতে চান তাঁরাও। স্বাগত জানিয়েছেন অভিনেত্রীরাও। তাঁদের সাফ কথা, ‘রাতের বেসামাল শহরকে তাঁরা বুঝে নিতে পারেন, যুঝে নিতে পারেন, এটা তারও শুরু।’

    এক্স প্ল্যাটফর্মে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আসব, তোমাদের পাশে থাকতে দিও।’ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘দেখা হবে।’ বাংলা ছবির জগতের বেশ কিছু নামী মুখকে যাদবপুরে স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে জড়ো হতে দেখা যাবে বলেও জানা গিয়েছে। নায়িকা মিমি চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা কোথায় কোথায় থাকবেন।

    আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৩১ বছরের চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদ করছেন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ। এর মাঝেই টেলি অভিনেত্রী ও নাট্যকর্মী গুলশনারা খাতুনের মন্তব্যের জেরে তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নেটপাড়ায়। গুলশনারা নিজেও এই প্রতিবাদ জমায়েতে থাকবেন জানিয়ে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রতিটি পুরুষ চরিত্রেরই ধর্ষক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চিৎকার করে বলছি। যদি আপত্তি থাকে আমাকে বন্ধুতালিকা থেকে সরিয়ে দেবেন।’ আর তাতেই প্রায় গর্জে উঠেছেন টলিপাড়ার অনেকে। সেখানে শুধু পুরুষেরা নন, মহিলারাও প্রতিবাদ করেছেন সমস্বরে।
  • Link to this news (এই সময়)