কারখানার আধুনিকীকরণে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা আগেই করেছিল ইস্কো। এ বার সংস্থা জানাল, দুর্গাপুজোর পরই ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে শুরু হবে বার্নপুর ইস্কোর আধুনিকীকরণের কাজ। আধুনিকীকরণ সম্পূর্ণ হলে ইস্কোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৭ মিলিয়ন টন, যা ইস্পাত উৎপাদনে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত হবে।একইসঙ্গে এই আধুনিকীকরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১২ থেকে ১৫ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি ইস্কোর। আধুনিকীকরণের কাজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য সোমবার ইস্কো সংলগ্ন ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ইস্কোর তরফে উপস্থিত ছিলেন এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (প্রজেক্ট) সুরজিত মিশ্র, এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (জেনারেল) ইউপি সিং, চিফ জেনারেল ম্যানেজার (টাউনশিপ) বিনোদ কুমার।
বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করা বার্নপুরের তৃণমূল কাউন্সিলার অশোক রুদ্র জানান, বৈঠকে তাঁদের জানানো হয়েছে, ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন করে উৎপাদন হবে ৪ মিলিয়ন টন ইস্পাত। নির্মাণকাজ শুরু হবে পুজোর পরেই। ইস্কোর পুরোনো কারখানায় উৎপাদন হতো আড়াই মিলিয়ন টন ইস্পাত। সেই ক্ষমতাও বাড়িয়ে করা হবে ৩ মিলিয়ন টন। আধুনিকীকরণের জন্য এমএম দস্তুর ও মেকনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।
সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, এই সময়ে উন্নয়নমূলক কাজ হিসেবে প্রথমে ৫৬০টি ফ্ল্যাট, পরে কয়েক হাজার কর্মীর জন্য বহুতল আবাসন ও চওড়া রাস্তা তৈরি করা হবে। অশোক বলেন, ‘ইতিমধ্যে নবান্নে এসে রাজ্য সরকারকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন ইস্কো কর্তারা। পুরো বিষয়টি জেনে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে এত বড় বিনিয়োগের জন্য কলকাতায় বাণিজ্য সম্মেলনে ইস্কোকে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানতে পেরেছি।’
ইস্কোর চিফ অফ কমিউনিকেশন তথা জেনারেল ম্যানেজার ভাস্কর কুমার বলেন, ‘এলাকার সমস্ত জনপ্রতিনিধি আমাদের স্টেক হোল্ডার। তাই তাঁদের পুরো বিষয়টি জানিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাঁরাও আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’ এই আধুনিকীকরণে গোটা আসানসোলের অর্থনীতি বদলে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন ভাস্কর কুমার।
তবে ইস্কোর বিরুদ্ধে কিছুটা ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন অশোক। বলেন, ‘এই বিনিয়োগে আমরা অত্যন্ত খুশি। তবে পুরসভা বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কাজে ইস্কো কর্তৃপক্ষ এনওসি দেন না। গতবার ইস্কোতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকায় আধুনিকীকরণের কাজ হয়েছিল। তখন জমির বিনিময়ে ২৪০ জনের চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। যার মধ্যে চাকরি পেয়েছেন মাত্র ১৭৯ জন। বাকিদেরও স্থায়ী কাজ দিতে হবে।’
তিনি জানান, স্থানীয় কাউন্সিলারদের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, পরবর্তী ক্ষেত্রে এনওসি-র প্রসঙ্গে যেন গুরুত্ব দেয় ইস্কো। এছাড়া আধুনিকীকরণে যে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তাতে বহিরাগতদের পরিবর্তে সুযোগ দিতে হবে স্থানীয়দের। এ জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।