• বর্ধমানের অজ গাঁয়ের এই বীর বিপ্লবীকে চেনেন? ইংরেজদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন ইনি...
    ২৪ ঘন্টা | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • অরূপ লাহা: বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মস্থান পূর্ব বর্ধমানের বড়বৈনান পঞ্চায়েতের সুবলদহগ্রামে। তিনিই গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। সারা দেশ জানে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর অবদানের কথা। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একই সারিতে উচ্চারিত হয় রাসবিহারী বসুর নামও। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মস্থান আজও কোন অজ্ঞাত কারণে জনগণের আগ্রহ থেকে, কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে ব্রাত্য। তবুও সুবলদহের বাসিন্দারা লড়ছেন বিপ্লবীর স্মৃতিসম্পত্তি রক্ষার জন্য।

    সম্প্রতি এক অদ্ভুত ঘটনা জানা গেল! রাসবিহারী বসুর  নামে থাকা জমির রেকর্ড বদলে গিয়েছে! সেই কারণে তাঁর জমিতে তাঁর স্মৃতিরক্ষার জন্য কিছু করা যাচ্ছে না। গ্রামবাসীরা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সুবলদহ মৌজায় রাসবিহারী বসু, বিজনবিহারী বসু এবং বিপিনবিহারী বসুর নামে জমির রেকর্ড ছিল। বর্তমানে এল আর রেকর্ড  অনুসারে, সেই জমি অন্য দু'জনের নামে রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামের মানুষজন। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ তাঁরা। তাঁরা প্রশাসনের কাছে এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ১০ শতক জায়গার জমির রেকর্ড যাতে তাঁর নামেই ফিরে আসে, সেটাই চাইছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্মস্থান সুবলদহ গ্রাম যাতে মডেল গ্রামে রূপান্তরিত হয়, তুলছেন সেই দাবিও। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার।

    রাসবিহারী বসুর জন্ম ১৮৮৬ সালে, বর্ধমানের সুবলদহ গ্রামে। রাসবিহারী বসুর পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল  চন্দ্রনগর। সেই কারণে চন্দ্রনগরেই রাসবিহারীর শিক্ষালাভ। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত হন (১৯০৮)। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতায় সরকারের সন্দেহের উদ্রেক হয়। 

    ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এই বিপ্লবী নেতা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক। ১৯১২ সালে দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা হামলায় নেতৃত্বদানের কারণে পুলিস তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ সালে জাপানে পালিয়ে যান। কীভাবে? ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ 'সানুকি-মারু'তে চেপে তিনি ভারত ত্যাগ করেন। তার আগে পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তাঁরই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন জোগায়।

    ১৯৪২ সালে রাসবিহারী বসু জাপানে আজাদ হিন্দ গঠন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আজাদ হিন্দ ফৌজকে জাপান ভীষণভাবে সমর্থন করেছিল এবং সে দেশের বাইরের অনেকেই এই বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। বলা হয় যে, আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠার ধারণাটি মূলত মোহন সিং-এর মস্তিষ্কপ্রসূত। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার সম্মানসূচক 'Second Order of the Merit of the Rising Sun' খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)