সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিসিটিভি ফুটেজ আর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া ডাক্তারদের দেখাতে হবে। এই দাবিতে অনড় ইন্টার্ন থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা আজ আউটডোর পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তার জেরেই সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত শিকেয়। ফলে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। যার জেরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগীর আত্মীয়রা। তবে আর জি কর-সহ কয়েকটি হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা শুরু হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতেই পূর্ত ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সদ্য নিযুক্ত অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল চারতলার মেরামতির কাজ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন। টানা ৪৮ ঘণ্টা সন্দীপ ঘোষ আর জি করের বাইরে। এমনকী আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারের কোনও পদেও তিনি নেই। তা সত্ত্বেও কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল রাতে গভর্নিং বডির বৈঠক হয়। সেখানে বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা হাজির ছিলেন। মাঝরাত পর্যন্ত বৈঠক চলে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাঁরা তাঁদের দাবি থেকে নড়বেন না। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে আউটডোর পরিষেবা।
বেসরকারি হাসপাতালে এমার্জেন্সি, ট্রমা কেয়ার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু আউটডোরে অ্যাপয়েন্টমেট সব বাতিল। বহু দূর থেকে রোগীরা এসে দেখছেন এই পরিস্থিতি। ফলে চূড়ান্ত নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের। এদিকে সরকারি হাসপাতালেও একই ছবি। গতকাল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগীদের চিকিৎসা শুরু করারও অনুরোধ করা হচ্ছে। পরে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, অধ্যাপকরাও এসে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে যান। কিন্তু এর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে কার্যত অনড় তাঁরা। ফলে মাঝরাতে অধ্যাপক ও অন্য সিনিয়রদের দেখা যায় এমার্জেন্সিতে থেকে রোগী পরিষেবা চালু রাখতে।
প্রসঙ্গত, এক একটি মেডিক্যাল কলেজে অন্তত ২ থেকে ৩ হাজার ডাক্তারি পড়ুয়া থাকেন। কিন্তু তাঁরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় প্রশাসনিক দায়িত্বে যাঁরা তাঁদেরই বাধ্য হয়ে পরিষেবা চালু রাখার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এমন পরিস্থিতি হয়নি। অবস্থা সামলাতে দুপুরে বৈঠক করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। একটি সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি সামলাতে চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসকদের নামানো হতে পারে। কিন্তু তাতেও সমাধান মিলবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। আবার নন-মেডিক্যাল ছাত্ররাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে সূত্রের খবর। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
এহেন পরিস্থিতিতে বহূ দূর থেকে আসা রোগীদের চূড়ান্ত হয়রানিতে পড়তে হয়েছে। খড়দা, আগরপাড়া, বাঁকুড়া দূর দূর থেকে রোগীরা এসেছেন, আউটডোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভ্রান্তের ভঙ্গিতে। তাঁদের চোখের সামনেই স্টেথো গলায় ঝোলানো ডাক্তারবাবুরা থাকলেও রোগীদের দেখতে রাজি নন তাঁরা। এই অবস্থায় রোগীর কিছু হলে চিকিৎসকদের কি নৈতিক দায়িত্ব থেকে যায় না? নাগরিক সমাজ এমন প্রশ্ন কি তুলবেন না?