গোপাল সূত্রধর, পতিরাম: ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। স্বাধীনতার আনন্দে উৎফুল্ল গোটা দেশ। দেশের নানা প্রান্তে উড়ছে জাতীয় পতাকা। তখন বিষাদের সুর তৎকালীন দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। কারণ তখনও স্বাধীনতা অর্জন করেনি বালুরঘাট। বালুরঘাট তখন রাজশাহী বিভাগের দিনাজপুরের একটি অংশ। একদিকে বালুরঘাটকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে দিল্লিতে তোড়জোর শুরু করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তখন মুসলিম লিগের নেতারা বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবনে ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা তুলে দেন। তিনদিন ধরে চলে ক্ষোভ, উত্তেজনা, অস্থিরতা, প্রতিরোধ। অবশেষে ১৮ আগস্ট বালুরঘাটে ঘোষণা হয় স্বাধীনতা। খুশি, আনন্দ উল্লাসে ভরে উঠে বালুরঘাট। কংগ্রেস নেতারা ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বালুরঘাট বের করেন বিশাল মিছিল। তাই এবারও বালুরঘাটের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে ১৮ আগস্ট।
এবিষয়ে বালুরঘাটের ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ বলেন, বালুরঘাটের ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বালুরঘাটবাসী প্রথম স্বাধীনতা অনুভব করেছিলেন। শুধু বালুরঘাট নয়, দিনাজপুরের ইতিহাসেও উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ১৮ আগস্ট। তিনদিন এই শহরে টানটান উত্তেজনা ছিল। ওই দিন বালুরঘাট শহরের হাইস্কুল মাঠে বিশাল জমায়েত হয়। তাই আজও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়। শহরের বিশিষ্ট ও প্রবীণ শিক্ষক তথা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রশাসক হরিপদ সাহার কথায়, আমরা তখন অনেক ছোট। স্বাধীনতা সংগ্রামী রাধামোহন মোহন্তের কাছে শুনেছি এই দিনটির কথা। এদিকে বালুরঘাটের ১৮ আগস্ট উদযাপনের জন্য একটি সংস্থার তরফে নানা আয়োজন করা হচ্ছে। এবিষয়ে বিশিষ্ট নাট্যকর্মী প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস বলেন, আমাদের সংস্থার ৩০ বছর পূর্তি হচ্ছে। পাশাপাশি এই দিনটিতে প্রথম বালুরঘাট স্বাধীনতা লাভ করে। তাই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি আমরা।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করলেও বালুরঘাট ও তৎসংলগ্ন কিছু অঞ্চল নোশনাল এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়। তাই এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বালুরঘাটের প্রশাসনিক ভবনে পতাকা কে উত্তোলন করবেন, তা নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়। শোনা যায়, অবশেষে প্রশাসনিক ভবনে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেন মুসলিম লিগের নেতারা। কিন্তু বালুরঘাটের কংগ্রেস নেতারাও দিল্লিতে দরবার শুরু করেন। তিনদিন চলে নানা টানাপোড়েন। এর মধ্যে গোর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যরা বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দখল নিতে গেলে পাঠান ও বেলুচ রেজিমেন্টের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। হিলিতেও দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বালুরঘাট শহরে টহল দিচ্ছিল পাকিস্তানি খানসেনা। অবশেষে ১৮ আগস্ট সকাল ৭ টা, স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াল ডাউন নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেসের সংযোগকারী বাস। বাস থেকে নামলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা কংগ্রেস নেতা সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, মহারাজা বোস, শৈলেন দাস সহ আর ও অনেক কংগ্রেস নেতা। তাঁরা এসে ঘোষণা করলেন বালুরঘাটের স্বাধীনতা দিবসের কথা। বালুরঘাট ভারতেই অংশ। প্রশাসনিক ভবনে তোলা হয় জাতীয় পতাকা। বিকেলে হয় বিরাট মিছিল।