• ‘আমাকে অসম্মান করুন, কিন্তু বাংলা মাকে অসম্মান করবেন না’, মমতার বার্তা মধ্যরাতের আন্দোলনকেই?
    আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৪
  • আরজি করে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে যেন বাংলাকে কোনও ভাবে অসম্মান না করা হয়, প্রাক্‌-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে যত পারেন অসম্মান করুন, কিন্তু বাংলা মাকে অসম্মান করবেন না।’’ বুধবার মধ্যরাতে শহর জুড়ে মহিলাদের যে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই আন্দোলনকেই পরোক্ষে মমতা বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

    আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদের আঁচ লেগেছে দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও। দিল্লি থেকে মুম্বই কিংবা চেন্নাই, বিভিন্ন প্রান্তে হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। সার্বিক ভাবে কলকাতা শহরের প্রতিটি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। প্রভাব পড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং সিপিএম এক যোগে আক্রমণ করেছে তৃণমূল সরকারকে। মমতার পদত্যাগ চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গোটা ঘটনার অভিঘাতে শুরু থেকেই কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে তৃণমূল।

    মমতা অবশ্য প্রথম থেকেই দোষীদের ফাঁসির সাজা চেয়েছেন। যত দিন এই তদন্তভার কলকাতা পুলিশের হাতে ছিল, মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন, দ্রুত দোষীদের খুঁজে বার করে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে ফাঁসির আবেদন জানাতে। এমনকি, পুলিশকে সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন পুলিশমন্ত্রী মমতা। সোমবার তিনি নিহত চিকিৎসকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে জানান, রবিবারের মধ্যে এই ধর্ষণ-খুনের কিনারা করতে না পারলে তাঁর সরকারই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবে তদন্তভার। কিন্তু মঙ্গলবারই হাই কোর্ট এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

    আরজি করের ঘটনার নিন্দা করে তৃণমূল নেতারা প্রথম থেকেই একযোগে আক্রমণ করছেন বিজেপি এবং সিপিএমকে। সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা তথা বাংলা দেশের মধ্যে অন্যতম নিরাপদ স্থান। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের বদনাম করা হচ্ছে এবং নেপথ্য রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত। বুধবার মমতা যেন সেই সুরেই সুর মেলালেন। বাংলাকে অসম্মান না করার আর্জি জানালেন আন্দোলনকারীদের কাছে।

    আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতার মধ্যরাতে পথে নামছেন মহিলারা। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাত দখল’। কলকাতা তথা সারা বাংলা থেকে এই কর্মসূচির সপক্ষে সাড়া মিলেছে। এমনকি, তৃণমূলের অনেক নেতাও মধ্যরাতের জমায়েতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনিও মধ্যরাতের প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।

    বুধবারের অনুষ্ঠান থেকে বিরোধীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘আপনারা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির খেলা খেলবেন না। এর আগে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুরের মতো রাজ্য এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এই সামাজিক ব্যধিকে আমরা সকলে মিলে ঠেকাতে পারি। সিপিএম এবং বিজেপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। আমরাও দোষীর ফাঁসি চাই। কিন্তু আমার অনুরোধ একটাই, কোনও নির্দোষ যেন শাস্তি না পান।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)