• রাত দখল আন্দোলনে মানুষের ভিড় যাদবপুরে, স্লোগানে উঠল সুবিচারের দাবি...
    আজকাল | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ: 'শোক নয়, দ্রোহ'। মধ্যরাতের আগেই রাজপথ আপামর নাগরিকদের দখলে। 'মেয়েরা রাত দখল করো'-র জমায়েতে হাজির মহিলাদের সমসংখ্যক পুরুষরাও। হাতে মশাল, প্ল্যাকার্ড। সবার চোখেই জ্বলছে আগুন। স্বাধীনতার ভোরের আগে মধ্যরাতেই যেন সূর্যোদয়। 'রিক্লেম দ্য নাইট' আন্দোলনে এক ঐতিহাসিক রাতের সাক্ষী থাকল গোটা বাংলা।

    আন্দোলন শুধুমাত্র কলকাতা শহরে সীমাবদ্ধ নেই। বাংলার ২৫০টি শহর, মফস্বলে মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার আন্দোলনে জমায়েত হয়েছে। আট থেকে আশির স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সাড়া ফেলেছে গোটা দেশেই। দলহীন, রাজনৈতিক পতাকাহীন আন্দোলন নেহাত আর সাধারণ কোনও জমায়েত রইল না।

    'ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান দেওয়ার মাঝে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সৃজনী হালদারের বক্তব্য, 'কর্মক্ষেত্রে শুধু নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও মেয়েদের সমান নিরাপত্তা জরুরি। আরজি কর কাণ্ডের ঘটনার পর মেয়েরা ভীতসন্ত্রস্ত। আজও অধিকারের লড়াইয়ে আমাদের পথে নামতে হচ্ছে, এটা লজ্জার। আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলন চলতে থাকবে। যতদিন না আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।'

    লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতে ঘামতে ঘামতে স্লোগানে গলা মেলাচ্ছিলেন ৮৫ বছর বয়সি মহুয়া দাশগুপ্ত। তিনি বললেন, 'গত শুক্রবারের পর থেকে রাতে ঘুম হচ্ছে না। এত নৃশংস ঘটনার পরে রাজপথে প্রতিবাদে সামিল আমার মেয়ের বয়সি মেয়েরা। তাঁদের আগামীর কথা ভেবে, নিরাপত্তার দাবিতে ঘরে চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। আন্দোলন যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ থাকব।'

    জনসাধারণের মাঝে তারকা ইমেজ ছেড়ে সাধারণ নাগরিক হিসেবে হাজির ছিলেন টলিপাড়ার বহু অভিনেতাও। জমায়েতের ভিতরে, কেউ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েই স্লোগান তুলছিলেন 'বিচার চাই, বিচার চাই'। সমাজমাধ্যমে আরজি কার কাণ্ডে যাদের প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায়নি, তাঁরাও সামিল আজকের জমায়েতে। যা এক বার্তাও পৌঁছল সাধারণের কাছে।

    'রিক্লেম দ্য নাইট' আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল সত্তরের দশকে। কয়েক দশক পেরিয়ে আবারও এক ইস্যুতে জোরদার আন্দোলন বাংলার রাজপথে। প্রথমবার। ১১ বছর আগে কামদুনি কাণ্ডের প্রতিবাদেও রাজপথে নেমেছিলেন নাগরিকরা। তবে রাত জেগে আন্দোলন এর আগে বাংলায় হয়নি। মধ্যরাতে শুরু হলেও আন্দোলন চলবে ভোর পর্যন্ত। যেন নতুন ভোরের আশা নিয়ে ঘরমুখো হবেন মেয়েরা। নিঃসন্দেহে সমাজমাধ্যমে ডাকা আন্দোলন নতুন ইতিহাস গড়ল বাংলার বুকে।
  • Link to this news (আজকাল)