• ১৯৪০ সালের ১২মে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: স্বাধীনতা আন্দোলনের  ইতিহাসে ঝাড়গ্ৰাম তথা জঙ্গলমহলের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। অরণ্যভূমিতে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তির আধিপত্য স্থাপনের সূচনাতেই অধিকার রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল। পূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত সে লড়াই কখনও থামেনি। স্বাধীনতা দিবসে অরণ্য ভূমির মানুষ আজও ভূমিজ বীরদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। 

    বাংলায় ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে ঝাড়গ্ৰামের মানুষ প্রথম বিদ্রোহ করেছিলেন। কম্পানি দিল্লির সম্রাটের কাছে ১৭৬৫  দেওয়ানী সনদ লাভ করে। এরপরেই অধিক খাজনা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়। ঝাড়গ্ৰাম তথা জঙ্গলমহলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে গড় রাজারাও এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন। এনসিন ফার্গুসনের নেতৃত্বে ১৭৬৭ সালে প্রায় চার কম্পানি সিপাহি ও ইউরোপীয় সার্জেন্ট বিদ্রোহে দমনে নামে। বিদ্রোহের আগুন সহজে নেভেনি। চৌত্রিশ বছর ধরে দমন পীড়নের পর ইংরেজ শক্তিকে শেষপর্যন্ত আপষে আসতে হয়। জমির মালিকানার সম্পূর্ণ অধিকার ভূমিজ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যায়নি। কম্পানি সরকারকের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই এলাকার মানুষ বিদ্রোহ করেছেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভূমিজ মানুষের অধিকার রক্ষা এটাই ছিল প্রথম সংগ্ৰাম। বিংশ শতাব্দীর সূচনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ ঝাড়গ্ৰামেও এসে পড়েছিল। স্বাধীনতা প্রিয় ঝাড়গ্ৰামের মানুষ প্রথম দিন থেকে সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। মেদিনীপুর থেকে বিপ্লবীরা ১৯০২ সাল থেকে ঝাড়গ্ৰামের জঙ্গলপথ দিয়ে বাঁকুড়ার ছেঁদাপাথরে পাহাড়ের গুহা ও নয়গ্ৰামের গভীর অরণ্যে রিভলভার চালানোর অনুশীলন করতে যেতেন। জেলার তরুণ সমাজ বিপ্লবীদের সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতার আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ ১৯২২ সালে অরণ্যভূমির মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে ঝাড়গ্ৰামের বিনপুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্ৰামী বিহারিলাল পড়্যা স্বাধীনতা সংকল্পের বাক্য পাঠ করেন। হাড়দা, কুই, কাঁকো ও বিনুপুর এলাকার মানুষ গর্বের সঙ্গে সেই দিনের কথা এখনও মনে রেখেছেন। স্বাধীনতা লড়াই এরপরেই জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁথি থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের খবর সম্বলিত বুলেটিন বের হতো। ঝাড়গ্ৰামের গোপীবল্লভপুরের বিপ্লবীরা বুলেটিনের খবর হাতে লিখে নিয়মিত এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। তিরিশের দশকের সময় থেকে রমেশ চন্দ্র কোঙার, গোপীনাথ পতির মতো নেতারা জঙ্গলভূমিতে স্বাধীনতার আন্দোলন আরও ছড়িয়ে দেন। সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪০ সালে ঝাড়গ্ৰামে এলে আন্দোলনের ঢেউ আরও ছড়িয়ে পড়ে। শহরের দুর্গা ময়দানের (তৎকালীন সময়ে লালাগড় ময়দান পরিচিত ছিল) জনসভায় ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে আপষহীন লড়াইয়ে ডাক দেওয়া হয়। সেই ডাকে ঝাড়গ্ৰামের সকল স্তরের মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। অধিকার রক্ষার লড়াই থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সবসময় এই জেলার মানুষ সামনের সারিতে থেকেছে। অরণ্যভূমির মানুষ আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে তার স্মরণ করেন। শহরের বাসিন্দা তন্ময় সিংহ বলেন, ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে এই এলাকার মানুষের লড়াইয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। ঝাড়গ্ৰাম তথা জঙ্গলমহলের মানুষ ইংরেজদের আধিপত্য কোনওদিন মেনে নেয়নি। যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই বিদ্রোহ করেছে। অরণ্যভূমির সেইসব লড়াইয়ের কথা ইতিহাসে স্থান পায়নি। স্বাধীনতা দিবসে নাম না জানা বীরদের কথা এলাকার মানুষ আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪০ সালের ১২মে এখানে এসেছিলেন। তৎকালীন লালগড় ময়দানে জনসভাও করেছিলেন। সেই দিনটিও এখানে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। • ফাইল ছবি
  • Link to this news (বর্তমান)