• সাগরকুটিরকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • মইদুল ইসলাম খান, আরামবাগ: ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় আজ থেকে ৭৭ বছর পূর্বে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে আরামবাগের বড়ডোঙ্গল গ্রামের নাম ওতপ্রতভাবে জড়িত। তবুও স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতায় তেমন স্থান পায়নি বড়ডোঙ্গল। বিপ্লবী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সাগরকুটির আজও অবহেলিত। এখানে বসেই আন্দোলনের ছক কষতেন বিপ্লবীরা। হেরিটেজ ঘোষণার দাবি থাকলেও তা আজও পূরণ হয়নি। আশাহত বাসিন্দারা। নিস্তব্ধে নিভৃতে একা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাগরকুটির।‌ পঞ্চায়েতের তরফে ছোট ছোট স্কিম করে সাগরকুটির সাজানোর চেষ্টা হলেও বাড়িটির পুরোপুরি মেরামত হয়ে ওঠেনি। তাই হেরিটেজ ঘোষণা করে সাগরকুটিরের আমূল সংস্কার চাইছেন বাসিন্দারা।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯২১ সালে বড় ডোঙ্গলে বন্যাত্রাণের কাজে এসেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তিনিই জায়গাটি নির্বাচন করেন। সাগরকুটিরকে কেন্দ্র করে আরামবাগে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়। প্রফুল্লচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে আরামবাগের নারী, পুরুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মৃগেনবালা রায়, সুশীলাবালা দাসীকে গ্রামের মহিলাদের আন্দোলনে যুক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। শুরু হয় দেশ বাঁচানোর লড়াই। গ্রামের মানুষের মুখে মুখে আজও ফেরে বরদামণি হাইত(হাবুর মা), মৃগেনবালা দেবী(কেষ্টর মা), তীর্থনাথ ঘোষের মা, মাখনলাল হাজরার স্ত্রী, লক্ষ্মী জানার মায়েদের নাম। যাঁরা গোয়ালিনি ও মেছুনির ছদ্মবেশে কুটিরে খাবার পৌঁছে দিতেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপ্লবীদের সেবা শুশ্রুষা করতেন।

    ১৯৩১ সালে জেলার আইন অমান্য আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি ছিল সাগরকুটির। প্রফুল্ল ঘোষ, বিজয় মোদক, হেমন্ত বসু, অতুল্য ঘোষ, প্রাণকৃষ্ণ মিত্র, ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের মতো বিপ্লবীরা এই কুটিরে এসে আন্দোলনের গতি প্রকৃতি কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেন। গ্রামের মহিলারা গোপনে তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন। যে আন্দোলনে হেমালিনীদেবী, এককড়িবালা ঘোষের মতো মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সরকার আরামবাগের আইন অমান্য কমিটিকে বেআইনি ঘোষণা করে। পরের দিন ‘সাগর কুটির’ দখল করে ব্রিটিশ পুলিস। কুটির ফেরাতে এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন। গ্রামের মহিলারা কুটির দখল করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিসের লাঠির ঘায়ে জখম হন। 

    সঞ্জিত অধিকারী বলেন, আমার দাদু লক্ষ্মীনারায়ণ অধিকারী স্বাধীনতা আন্দোলনে জেল খেটেছেন। তাঁর মাসিমা সুশীলাবালা দেবী গ্রামের মহিলাদের স্বাধীনতা আন্দোলন অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বিপ্লবীদের মাতৃস্নেহে বহুবার রক্ষা করেছেন। প্রফুল্লচন্দ্র সেন তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে স্থানীয় বড়ডোঙ্গল রমানাথ ইন্সটিটিউশনকে সাগর কুটির সংলগ্ন জায়গা দান করে যান। এলাকায় লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে যাতে এলাকার ছেলেমেয়েরা গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। মহিলাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন চরকা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই তাঁর লড়াই থেমে থাকেনি। তিনি এই এলাকার উন্নয়নের কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গ্রামের সাগরকুটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু, আজ তা অবহেলিত।

    বড়ডোঙ্গলে গিয়ে দেখা গেল, সাগরকুটিরের মেরামত হলেও দেওয়ালে রয়েছে ফাটল। সেখানে নেই প্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং বিপ্লবীদের কোনও স্মৃতি চিহ্ন। পঞ্চায়েতের তরফে বাগানটি সাজানো হলেও পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে তা পুরোপুরিভাবে সাজানো হয়ে ওঠেনি। বাগানে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে দোলনা। 

    সালেপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উত্তম বেরা বলেন, পঞ্চায়েতের তরফে ছোট ছোট স্কিম তৈরি করে কাজ করা হচ্ছে। বাগানে থাকা দোলনাগুলি পাল্টে দিয়ে নতুন দোলনা বসানো হবে। বাচ্চাদের খেলার জন্য একটি জিরাফ তৈরি করা হবে। তৈরি হবে জলের ফোয়ারা। তবে গ্রামবাসীদের দাবি যুক্তিযুক্ত। আমরাও চাই সাগর কুটির হেরিটেজ হিসেবে তকমা পাক। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)