• আরামবাগে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি, সংগ্রহশালা চাইছেন বাসিন্দারা
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • রামকুমার আচার্য, আরামবাগ: স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান আরামবাগ। মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি। স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত অনেকের বসতবাড়ির সাক্ষীও আরামবাগ। ভৌগোলিক অবস্থানে আরামবাগ মহকুমা আগে অনেক দুর্গম ছিল। নদী ও খাল পথেই যাতায়াত করতে হতো। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এখানে আত্মগোপন করে থাকতেন। আরামবাগের বিভিন্ন জায়গা ছিল তাঁদের গোপন ডেরা। ইতিহাস খুঁড়ে এমন অনেক তথ্যেরই সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। তাই আরামবাগের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিয়ে সংগ্রহশালা গড়ার জোরালো দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহলে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহৃত সামগ্রী, চিঠি, পত্র পত্রিকা সহ নানা সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তা একত্রিত করে সংগ্রহশালা গড়লে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে। ফলে এই দাবিতে অনেকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছেন। 

    জানা গিয়েছে, ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদা, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য আরামবাগ। তাঁদের সম্পর্কে কেউ অজানা নন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজও পোঁতা রয়েছে এই মহকুমাতেই। তিনি মায়াপুরের কল্যাণকেন্দ্রে থাকতেন। ফলে সেখানে তাঁর ব্যবহৃত চশমা, খাট, লাঠি প্রভৃতি একাধিক সামগ্রী রয়েছে। আরামবাগের সাগরকুটিরও স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ডেরা। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছিল আরামবাগ থেকেই বলে দাবি গবেষকদের। 

    খানাকুলের বাসিন্দা ইতিহাস গবেষক দেবাশিস শেঠ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্লচন্দ্র সেন, অতুল্য ঘোষ ও বিজয় মোদকের নেতৃত্বে আরামবাগের সাগরকুটির থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পরিচালিত হয়। এছাড়াও রাধাকৃষ্ণ পালের ভূমিকাও আরামবাগে উল্লেখযোগ্য। আরামবাগ মহকুমায় বহু মহিলা সংগ্রামীর ইতিহাসও পাওয়া যায়। কিন্তু, সেইসব তথ্যকে একত্রিত করা প্রয়োজন। এরজন্য সাগরকুটির বা মায়াপুর কল্যাণ কেন্দ্রে সরকারি উদ্যোগে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। ঐতিহাসিক দলিলগুলি নষ্ট হতে বসেছে। সংগ্রহশালায় সংগ্রামীদের জীবনপঞ্জি সহ ছবি, ব্যবহৃত সামগ্রী সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে। এজন্য সংগ্রামীদের পরিবারগুলির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। এই মিউজিয়াম গড়ে উঠলে পড়ুয়ারা যেমন উপকৃত হবেন একইসঙ্গে সংগ্রামীদেরও সম্মান জানানো যাবে। 

    আরামবাগের বাসিন্দা প্রাক্তন অধ্যাপক গোপালচন্দ্র সিনহা বলেন, আরামবাগের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করার জন্য অনেক পড়ুয়াকেই উৎসাহ দিয়েছি। অনেক সময় তথ্য পেতে গিয়ে গবেষকদের অসুবিধা হয়েছে। আগামী দিনে তথ্যের অপ্রতুলতা আরও বাড়বে। সংগ্রহশালা গড়ে উঠলে সবাই উপকৃত হবে। 

    আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে রয়েছে পরাধীন ভারতবর্ষে ব্যবহৃত একটি চরকা। কলেজের লাইব্রেরিয়ান বাসুদেব অধিকারী বলেন, আরামবাগের  বিমল মিত্র ওই চরকা কলেজকে দান করেছিলেন। মহকুমাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনতা পূর্বের নানা ইতিহাস রয়েছে। একাধিক স্থাপত্যও এখানে আছে। সেগুলি প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িতদেরও নানা সামগ্রী, পত্র পত্রিকা থাকতে পারে। সেগুলি সংগ্রহশালায় স্থান পেলে খুব ভালো হয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)