• থানায় পতাকা তুলতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতে শহিদ হন চুনারাম ও গোবিন্দ মাহাত
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • বাপ্পা রায়, মানবাজার: ফি বছর স্বাধীনতা দিবস এলে মনে করিয়ে দেয় পুরুলিয়ার তৎকালীন মানভূমের বিপ্লবীদের সেই লড়াই। পুরুলিয়ার মানবাজারের দুই বিপ্লবী শহিদ চুনারাম মাহাত ও গোবিন্দ মাহাতর কথা। স্থানীয়দের স্মৃতিতে গাঁথা রয়েছে মানবাজারে দুই বিপ্লবীর কথা। দেশ স্বাধীনতা লাভের আগে ১৯৪২ সালে ডাক দেওয়া হয়েছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের। সারা দেশের সঙ্গে সঙ্গে সেই আন্দোলনের রেশ এসে পড়েছিল পুরুলিয়ায় তৎকালীন মানভূমে। ব্রিটিশদের তাড়াতে রক্ত দিয়ে লড়াই করেছিলেন সেই সময় মানভূমের বিপ্লবীরাও।

    ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের উন্মাদনা পৌঁছে ছিল পুরুলিয়ার মানবাজারে। সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন মানবাজারের তরুণ বিপ্লবীরা। লড়াই করতে গিয়ে বিটিশ পুলিসের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন মানবাজারের দুই বিপ্লবী চুনারাম মাহাত ও গোবিন্দ মাহাত।

    ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এবং বরাবাজার থানায় হামলা চালায় বিপ্লবীরা। জানা গিয়েছে, তার আগে পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে বান্দোয়ানের ভজহরি মাহাতর জিতান গ্রামের বাড়িতে তৈরি করা হয়েছিল ব্লু প্রিন্ট। হামলা চালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়েছিল দু’টি থানা। বিপ্লবীরা দুটি থানাই দখল করে নিয়েছিল। বেঁধে রাখা হয়েছিল পুলিসকে। সেই সঙ্গে থানার সমস্ত কাগজ পুড়িয়ে দিয়েছিল বিপ্লবীরা। দুই থানায় ব্রিটিশ পতাকা তুলে লাগানো হয়েছিল দেশের তেরঙ্গা পতাকা। পরিকল্পনা ছিল মানবাজার থানাও ঘেরাও করার। কিন্তু, সেদিন বিপ্লবীদের অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। 

    স্থানীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কালাচাঁদ মাহাতো জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মানবাজার থানার রাঙাটার গ্রামে বিপ্লবীরা জড়ো হয়েছিলেন। পরদিন সকালে একসঙ্গে বিপ্লবীরা মানবাজার থানা দখলের লক্ষ্যে যান। সেই সময় ব্রিটিশ পুলিস বিপ্লবীদের লক্ষ্য আগাম বুঝতে পেরেছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে সত্যকিঙ্কর মাহাতোর নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করতে গেলে গুলি চালায় ব্রিটিশ পুলিস। সেই গুলিতেই থানা চত্বরে আন্দোলনের সামনে থাকা ১৮ বছরের দুই তরুণ বিপ্লবী লুটিয়ে পড়েন। মানবাজার থানার কুদা গ্রামের চুনারাম মাহাত ও নাথুরডি গ্রামের গোবিন্দ মাহাত। জখম হয়েছিলেন বহু বিপ্লবী। 

    দুই বিপ্লবীর আত্মত্যাগের স্মরণে মানবাজার থানার সামনে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর শহিদদের স্মরণ করা হয়। 

    পরে পুরুলিয়ার জেলা পরিষদ থেকে স্মৃতি রক্ষার জন্য মানবাজার থানা মোড়ে দুই বিপ্লবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়। তবে দুই বিপ্লবীর চুনারাম ও গোবিন্দ মাহাতর কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। পরিবারের কাছেও দুই বিপ্লবীর কোনও ছবি ছিল না। মূর্তির গঠন চেহারা সবটাই তাঁদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে স্কেচ আঁকা হয়। মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় কুমারী সেতুর নাম পরিবর্তন করেও রাখা হয়েছে চুনারাম-গোবিন্দ সেতু।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)