• নদীয়ার ভারতভুক্তির জন্য মাউন্টব্যাটেনকে চিঠি লিখেছিলেন কৃষ্ণনগরের মহারাজা
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। এই জেলাকে ভারতভুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বংশ। যা আজও জেলাবাসীর মুখে মুখে ফেরে। যদিও সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতির রং লেগেছে রাজবাড়িতে। বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কেও জড়িয়েছে রাজবাড়ি। কিন্তু জেলার ভারতভুক্তির ইতিহাসের আলোচনায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

    নদীয়াকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের কাছে দরবার করেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৎকালীন রাজা সৌরীশচন্দ্র রায়। শোনা যায়, তারপরেই নদীয়া জেলাকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। যদিও তারপরও অবিভক্ত নদীয়ার কিছু অংশ-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায়। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহকুমা নিয়ে তৈরি হয় ‘নতুন নদীয়া’। তখন অবশ্য তার নাম ছিল নবদ্বীপ। সেজন্য এখনও ১৮ আগস্ট তারিখে নদীয়া জেলায় স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

    নদীয়া জেলার প্রবীণ বাসিন্দা সঞ্জীব দত্ত বলেন, ব্রিটিশ সরকার প্রথমে ভুল করে নদীয়া জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। যখন প্রথম ব্রিটিশ সরকার রেডিওতে একথা ঘোষণা করে, নদীয়া জেলা জুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। তখন রাজবাড়ির তরফে মাউন্টব্যাটেনকে চিঠি লেখা হয়। তাতে কৃষ্ণনগরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছিল। এরপরই ব্রিটিশ সরকারের তরফে সংশোধিত ম্যাপ প্রকাশ করা হয়।

    অবিভক্ত নদীয়া জেলা অনেকটাই বড় ছিল। জেলার তিনটি মহকুমা-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ও চুয়াডাঙ্গা ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। স্বাভাবিকভাবেই দেশভাগের যন্ত্রণার ঝড় বয়েছে নদীয়া জেলাতেও। রানাঘাট, ধুবুলিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় উদ্বাস্তুদের ভিড় বেড়েছিল। তবে নদীয়ার বাসিন্দারা অবশেষে ভারতবাসী হতে পেরেছিলেন। তাতে অবদান রেখেছিল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি।

    বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করতে ব্রিটিশদের সহযোগিতা করেছিল কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার। এবছর লোকসভা ভোটে ‘রাজমাতা’ অমৃতা রায় বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়ান। তখন সেই ইতিহাস শাসক তৃণমূলের রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠে। পাল্টা বিজেপির তরফে দেশভাগের সময় নদীয়াকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে রাজবাড়ির অবদান তুলে ধরা হয়।

    অমৃতা রায় বলেন, নদীয়া জেলার শিকড়ে মিশে রয়েছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। নদীয়ার আত্মা হলো এই রাজবাড়ি। নদীয়াকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে রাজপরিবার যে ভূমিকা নিয়েছিল, তা আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। 

    নদীয়া ভাগের সময় যেন জেলার কীর্তন ও বাউলগানের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও দু’ভাগ হয়ে যায়। শ্রীচৈতন্যভূমি নবদ্বীপ ও কুষ্টিয়ায় লালন ফকিরের আখড়া দু’টি আলাদা রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও দু’টি জায়গাই নদীয়া জেলার সংস্কৃতির অংশ।
  • Link to this news (বর্তমান)