শিলিগুড়ি থানার পাশে শহিদ বেদি বহন করে চলেছে স্বাধীনতার স্মৃতি
বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
সঞ্জীত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শিলিগুড়িরও অংশগ্রহণ ছিল। একেবারে সামনে থেকে। তার স্মৃতি বহন করছে শিলিগুড়ি থানার পাশে থাকা শহিদ বেদি। এই বেদির কথা এই প্রজন্মের খুব কমজনই জানে।
১৯৪২ সাল, শিলিগুড়ি তখন ছোট্ট জনপদ। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গোটা দেশ উত্তাল। ওই বছর ৯ আগস্ট গান্ধীজি সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিস। তার প্রতিবাদে দেশজুড়ে শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। দেশবাসী এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারত ছাড়ো স্লোগানে। সেসময় ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ির আবহাওয়াও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গোটা দেশের সঙ্গে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রবলভাবে অংশ নিয়েছিল শিলিগুড়ি। আগস্ট মাসে শুরু হওয়া ভারত ছাড়ো আন্দোলন সেপ্টেম্বরে ভয়ানক আকার নেয়।
শিলিগুড়ি শহরের কিছু প্রবীণ নাগরিকের স্মৃতিচারণা ও বিক্ষিপ্তভাবে লেখা শিলিগুড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেসময় শিলিগুড়ির জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ হাজার। সেই মিছিলে সবধর্মের মানুষ অংশ নিয়েছিল। ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ স্লোগান দিতে দিতে ১৯৪২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর হাজার খানেক মানুষ শিলিগুড়ি শহরে মিছিল করে। নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন দুই কংগ্রেস নেতা বীরেশ্বর মজুমদার ও ধীরেন্দ্রনাথ রায়। আরও দুই নেতা শিউমঙ্গল সিং ও ব্রজেন্দ্রকুমার বসু রায়চৌধুরীকে পুলিস আগেই গ্রেপ্তার করেছিল। সকলেরই হাতে ছিল লাঠি সহ নানা দেশি অস্ত্র। সেই মিছিল শিলিগুড়ি থানা ঘেরাও করেছিল।
ইংরেজ শাসনে থাকা তখন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক ছিলেন কে কে ঘোষ। তিনিই তখন পুলিসকর্তা। কংগ্রেসের মিছিলের খবর পেয়ে তিনি আগেই থানার সামনে হাজির হয়েছিলেন। জনতা থানা ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিস লাইনে খবর পাঠিয়ে আরও ফোর্স আনান এসডিও। মহাত্মা গান্ধীবাদি স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। ততক্ষণে থানায় বাড়তি ফোর্স পৌঁছে যায়। মহকুমাশাসক নির্দেশ দিতেই ওই জময়েতে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চালায় পুলিস। পাঁচজন নিহত হন পুলিসের গুলিতে। অনেকে জখম হন। অসমর্থিত সূত্রে মৃতদের মধ্যে ছাবিলা সিং, মহাবীর সিং আর শঙ্কর সিং-এর নাম জানা যায়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন স্মরণে সেই স্থানে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয়।
শিলিগুড়ি থানার গেটের সামনেই সেই শহিদ বেদি। জানা যায়, শিলিগুড়িতে ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাগরিকরা যতদিন বেঁচেছিলেন, তাঁরা বেদির সামনে জড়ো হতেন। সেখানেই স্মৃতিচারণায় শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতেন। সেদিনের আন্দোলনে শহিদদের নাম পরিচয় সরকারিভাবে কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।