• পিছাবনির লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সংগ্রহশালার ভবন তৈরি হয়েও পড়ে, দ্রুত চালু করার দাবি
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাঁথি: কাঁথির পিছাবনিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সংগ্রহশালার ভবন তৈরি হয়েও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে রয়েছে। অবিলম্বে সংগ্রহশালাটি চালু করার দাবি তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার ৭৭তম বর্ষপূর্তির আগে সংগ্রহশালাটি চালু হবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে আশা নেই। এর আগে পূর্তদপ্তরের উদ্যোগে সংগ্রহশালার ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অন্দরে বিদ্যুতায়নের কাজ বাকি রয়েছে। সংগ্রহশালার ভবনের সামনের অংশে বাগান সহ সৌন্দর্যায়ন এবং চত্বরে আলোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা ছিল। তাও হয়নি। বলা হয়েছিল, সংগ্রহশালায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তত্ত্বাবধানে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত মানুষজনদের ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম রাখা হবে। মহকুমা তথা জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনী ও গান্ধীজীর ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র রাখা হবে। সেই উদ্যোগও থমকে। তাই কবে সংগ্রহশালাটি চালু হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, ১৯৩০সালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা কাঁথিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। রামনগরের সীমানা দিয়ে বয়ে চলা খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বুক চিতিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমরা ‘পিছাব নি’। অর্থাৎ কোনওভাবেই পিছিয়ে যাব না। আন্দোলন চালিয়ে যাব। স্থানীয় মানুষজনদের এই একরোখা জেদ ও ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মানসিকতার সম্মিলিত গর্জনের নামই ছিল পিছাবনি। পিছাবনিতে লবণ সত্যাগ্রহ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। ১৯৩০সালের ৬এপ্রিল ডাক্তার সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। ১১এপ্রিল ব্রিটিশ পুলিস সুরেশচন্দ্র ও আন্দোলনকারী ঝড়েশ্বর মাঝিকে গ্রেপ্তার করে। প্রতিবাদে ঝড়েশ্বরের মা পদ্মাবতীদেবী ইংরেজদের অত্যাচার সহ্য করেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে ঘিরে আরও নানা ঘটনা ঘটেছিল। এভাবেই ‘পিছাব নি’ থেকে পরবর্তীকালে লোকমুখে এলাকাটির নাম হয়ে যায় পিছাবনি। খালটির নামও হয়ে যায় পিছাবনি খাল। যদিও গ্রামের নাম আদতে নিমদাসবাড়। লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পীঠস্থান পিছাবনির সেই ইতিহাস অনেকটাই ফিকে হতে বসেছে। পিছাবনি হাইস্কুলের সামনে অবস্থিত শুধুমাত্র একটি শহিদস্তম্ভ এলাকার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। যদিও সেটাও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মলিন দশা। এলাকার মানুষ যাতে পিছাবনির গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে বেশি করে জানতে পারেন, তার জন্য ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সংগ্রহশালা তৈরির কথা ঘোষণা করেন। পিছাবনিতে দীঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কের পাশেই সরকারি জায়গায় বেশ বড় এলাকাজুড়ে সংগ্রহশালাটি রয়েছে। 

    সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সংগ্রহশালাটি তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সর্বত্র খাঁ-খাঁ করছে। ব্যবহারের অভাবে বারান্দা সহ সর্বত্র ধুলোবালির পোঁচ পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কেশব প্রধান বলেন, সংগ্রহশালাটি কবে চালু হবে, আমরা বুঝতে পারছি না। দ্রুত সংগ্রহশালাটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। দীঘার দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু শিক্ষাসদনের শিক্ষক নন্দগোপাল পাত্র বলেন, পিছাবনিতে সংগ্রহশালা চালু হলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নানা অজানা তথ্য সেখান থেকে জানতে পারবেন। অবিলম্বে সংগ্রহশালাটি চালু করার উদ্যোগ নিক প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে খবর, আরও কিছু পরিকাঠামোর কাজ বাকি থাকার কারণে সংগ্রহশালাটি চালু করা যাচ্ছে না। বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, গোটা বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে সংগ্রহশালাটি চালু হবে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)