• স্বাধীনতা অর্জনে জীবনের ১২ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুশেখর
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: আজ আমরা স্বাধীন ভারতে বসবাস করি। কিন্তু এই স্বাধীনতা অর্জন করতে দেশের যে বীর সন্তানরা এক সময় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন পূর্ণেন্দুশেখর গুহ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর যৌবনের ১২টি বসন্ত ব্রিটিশ কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে কেটেছে। ব্রিটিশ আমলে রংপুর অস্ত্র ষড়যন্ত্র মামলায় সাড়ে ১১ বছর ও ভারত রক্ষা আইনে আরও এক বছর জেলে পাঠানো হয় তাঁকে। ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ১৯৩৪ সালে তাঁকে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে অনশনে শামিল হন। ১৯৩৮ সালে আন্দামান থেকে অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে তাঁকে আনা হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। পরবর্তী জীবনে অধুনা বাংলাদেশের রংপুর হয়ে অসমের ধুবরিতে আসেন। সেখানেই তাঁর চাকরি জীবন কাটে। পূর্ণেন্দুশেখরের স্ত্রীর নাম নিলীমারানি গুহ। তাঁদের তিন পুত্র ও তিন কন্যা। বর্তমানে তাঁদের মধ্যে চার জন জীবিত।

    ১৯৫৫ সালে পূর্ণেন্দুশেখর গুহ কোচবিহারে বসবাসের জন্য জমি কেনেন। ১৯৬০ সালে এখানেই বাড়ি করে পরিবার সহ বসবাস শুরু করেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার ২৫ বছরে উদযাপনে ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে তাম্রপত্র প্রদান করেন। ২০১৪ সালে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লক্ষ টাকা দান করা হয়। এই টাকার সুদে স্নাতকস্তরে প্রথম স্থানাধিকারীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। 

    পূর্ণেন্দুশেখর গুহের পঞ্চম সন্তান অলোককুমার গুহ কোচবিহারের বাসিন্দা। তিনি বলেন, বাবা খুব কম বয়সেই স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ঠাকুরদা লালবিহারী গুহ পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। তৎকালীন পুলিস ঠাকুরদাকে জানায় যে ছেলে পূর্ণেন্দুকে সরিয়ে দিতে। না হলে গ্রেপ্তার করা হবে। এরপর ধুবরিতে আত্মীয়ের বাড়িতে সরিয়ে দেন ছেলেকে। সেখানেই পূর্ণেন্দুবাবু নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়েই তাঁরা কলকাতা থেকে অস্ত্র আনতে যান। রংপুরে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৩ সালে দু’টি মামলা হয়। রংপুর অস্ত্র ষড়যন্ত্র মামলায় সাড়ে ১১ বছর ও ভারত রক্ষা আইনে আরও এক বছর কারাদণ্ড হয়। জীবনের প্রায় সাড়ে ১২ বছর তাঁকে জেলে কাটাতে হয়। তার মধ্যে দীর্ঘ সময় তাঁকে আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি থাকতে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। ব্রিটিশ আমলের ভারতের বহু দামাল সন্তানই খুব কম বয়সে স্বাধীনতা আন্দোলনে শামিল হতেন। 

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ণেন্দুশেখর গুহ’র জন্ম ১৯১৪ সালের ১১ নভেম্বর। অধুনা বাংলাদেশের রংপুরের মাহিগঞ্জে। মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সে তিনি বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। রংপুরে ৩০ জনের একটা টিম ছিল। তিনি তাঁর নেতৃত্ব দিতেন। রংপুর অস্ত্র ষড়যন্ত্র মামলায় ধরে পড়ে তিনি আন্দামান সেলুলার জেলে পৌঁছলে সেখানে ১৯৩৭ সালের ৩৬ দিনের অনশনে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় সেলুলার জেলে বিপ্লবী গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহরা বন্দি ছিলেন। বন্দিদের অনশন ভাঙার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মানুষরা চিঠি দিয়েছিলেন। জীবনের ১৯ বছর বয়স থেকে ৩১ বছর বয়স পর্যন্ত বিট্রিশ জেলে কাটিয়ে পূর্ণেন্দুশেখর রংপুরে ফিরেছিলেন। সেখানেই বিয়ে করেন। পরবর্তীতে দেশভাগের পর চাকরি নিয়ে চলে যান ধুবরিতে। সেখানেও খেলাধুলো, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আজ তাঁর সন্তানেরা কোচবিহারে বসবাস করেন। সম্প্রতি কোচবিহার থেকেই ‘পূর্ণেন্দুশেখর গুহ---একটি অধ্যায়’ নামে সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।  পূর্ণেন্দুশেখর গুহ।
  • Link to this news (বর্তমান)