• অনাদরে পড়ে বিপ্লবীদের স্মৃতি বিজড়িত আশ্রম
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • উজ্জ্বল রায়, ধূপগুড়ি: অবহেলায় অনাদরে পড়ে রয়েছে একসময়ের বিপ্লবীদের আস্তানা ধূপগুড়ির বিদ্যাশ্রম। এই আস্তানা থেকে একসময় বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতো। রাত হলেই এখন সেই আস্তনার আশেপাশে বসে মদের আসর। স্বাধীনতা দিবস, আর গণতন্ত্র দিবসের দিন ছাড়া সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকে আশ্রমটি। অথচ ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিপ্লবীরা একসময় এই জঙ্গলঘেরা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

    বর্তমানে আশ্রমটির ভাঙাচোরা অবস্থা।‌ একটা সময়ে ‌যে আশ্রমে লবণ আর কেরোসিন তেল ছাড়া কিছুই কিনতে হতো না। সেখানকার তাঁত কলকাতার খাদি ভবনে যেত। ওই আশ্রমে কাজ করে এলাকাবাসী স্বনির্ভর হতেন। সেই আশ্রমটির বেহাল দশায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সকলেই চাইছেন, বিপ্লবীর স্মৃতি যেন মুছে না যায়।‌ যাতে সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ  করা হয়। 

    একটা সময় ধূপগুড়ি শহর সংলগ্ন বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান বিদ্যাশ্রম এলাকা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। বেশ কয়েকজন বিপ্লবী ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচার জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করে আস্তনা তৈরি করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী ১৯৫৩ সালে বিপ্লবী ধীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত তাঁর বাংলাদেশের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এখানে ২০০ বিঘার মতো জমি ক্রয় করে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ওপার বাংলা থেকে নৌকোয় করে নিয়ে আসেন বিভিন্ন আসবাবপত্র। পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন জায়গার বিপ্লবীরা এখানে আসেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, স্বাধীনতা সংগ্রামী সুধীরচন্দ্র আচার্য, বিখ্যাত বিপ্লবী রাখালচন্দ্র দে। রাখালচন্দ্র দে আন্দামান এবং কারোয়ার জেলে ইংরেজদের হাতে বন্দি ছিলেন।  

    ১৯৮৫ সাল নাগাদ আশ্রমে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় হরিজন স্কুল। সেখানে প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী মিলেমিশে হাসি-আনন্দে দিন কাটাতেন। হতো পড়াশোনা। বর্তমানে এই আশ্রমজুড়ে কোথাও যেন নীরবতা বিরাজ করছে। দিনের আলোতেও শুনতে পাওয়া যায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। সরকারি উদ্যোগে আশ্রমের জন্য একটি পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হলেও বাকি ঘরগুলি ভগ্ন অবস্থায়। 

    তবে এই আশ্রমের শেষ প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে বিপ্লবী কুমারেশ ঘোষের ভাগ্নি গৌরী ঘোষ। যিনি কলকতার সম্ভ্রান্ত পরিবারে একজন ডাক্তারের মেয়ে। বিএসসি পাশের পর নার্সিং করে একটি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। তিনি মামার হাত ধরে চলে আসেন এই আশ্রমে। পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে যোগ দেন আশ্রমের স্কুলে। এখনও গৌরীদেবী সন্ধ্যা হলেই আশ্রমের প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখেন। মনে মনে হয়তো একটাই প্রার্থনা করেন, বিপ্লবীর স্মৃতি যেন মুছে না যায়।‌ 

    গৌরীদেবী বলেন, একসময় আশ্রমের প্রাণ ছিল। ছিল হাসি, আনন্দ। আজ আর নেই। আমি আর ক’দিন। তবে বিপ্লবীদের স্মৃতিটুকু যেন রক্ষা করে সরকার। আশ্রমের পরিচলন কমিটির সভাপতি দেবপ্রসাদ রায় বলেন, আমরা চাই সরকারি উদ্যোগে বিপ্লবীদের ঘরগুলি সংস্কার করা হোক এবং বিপ্লবীদের বিভিন্ন জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হোক।
  • Link to this news (বর্তমান)