• বন্ধ আউটডোর, শামিল বেসরকারি হাসপাতালও, থমকে পরিষেবা, চরম ভোগান্তি
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কয়েকশো অপারেশন বাতিল। লক্ষ লক্ষ রোগীর ভোগান্তি। একের পর এক মর্মান্তিক মৃত্যু। শুক্রবার থেকে বুধবার—টানা পাঁচদিন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে এভাবেই চরম নাকাল হতে হল রাজ্যবাসীকে। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে অন্যান্য কাজের দিনে আউটডোরে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা পেতেন। আর বুধবার প্রায় চিকিৎসক-শূন্য খাঁ খাঁ আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে পারলেন মাত্র ১০০ জন! শুধু ইমার্জেন্সিতেই অন্যান্য দিন  চিকিৎসা পান ৬০০-৭০০ মানুষ। এদিন সেখানে মাত্র ২৮ জন ডাক্তার দেখাতে পারলেন! আর জি করের এখন বিচিত্র পরিস্থিতি! আবেগ- প্রতিবাদে আন্দোলনে নামা কয়েকশো ছাত্রছাত্রী, জুনিয়র ডাক্তার, প্রাক্তনী, সিনিয়রদের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন রাজনৈতিক লক্ষ্য চরিতার্থ করতে চাওয়া কিছু চিকিৎসক, রাজনৈতিক কর্মী, বাম-বিজেপি সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সব মিলিয়ে ‘অভয়া’কে ন্যায়বিচার দেওয়ার আন্দোলনস্থলে এখন স্বার্থের রুটি সেঁকতে শুরু করেছে বহু পক্ষ।

    অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের কী অবস্থা? এম আর বাঙুর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল রবীনচন্দ্র নাঁইয়াকে। তাঁর ছেলে বাবলু হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাবার রক্তবমি হচ্ছে। সেই অবস্থাতেই রেফার করেছে। এদিকে ন্যাশনাল বলছে, ওয়ার্ডেই পড়ে থাকবে রোগী। কারণ, ডাক্তার নেই। এক গ্লাস জল দেওয়ারও নাকি কেউ নেই। তাহলে যাবটা কোথায়?’ আর জি করে এসে ভাঙা পায়ের অপারেশন না হওয়ায় ক্রাচে ভর দিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন বিমান মণ্ডল। ডায়মন্ডহারবারের এই বাসিন্দা বললেন, ‘কে অপারেশন করবে? সবাই এখন আন্দোলন করছেন। হাসপাতালে থেকে লাভ নেই।’ এর মধ্যে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের ডাকা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কর্মবিরতিতে  ভোগান্তি চরমে ওঠে। বাইপাস লাগোয়া একের পর এক বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে এদিন তালা ঝোলানো ছিল। বুকিং থাকা রোগীদেরও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়েছে। অনেকে হাসপাতালে এসে জেনেছেন, চিকিৎসক মিছিলে অংশ নিতে বেরিয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার টাকার অ্যাম্বুলেন্স খরচ জলে গিয়েছে তাঁদের। 

    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে সকাল থেকে টিকিট ইস্যু হলেও আউটডোরে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। সেখানে রোগীর আত্মীয়স্বজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। উত্তাল পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিস। স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হয় দুর্গাপুর ও আসানসোলে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ ছিল। পরে রোগীদের চাপে ইমার্জেন্সিতেই রোগী দেখা শুরু করেন চিকিৎসকরা। নদীয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল ও নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ধর্নায় বসেন ডাক্তার ও নার্সরা। বিকেল পর্যন্ত সেই ধর্না চলে। আউটডোর বন্ধই ছিল। রায়গঞ্জ মেডিক্যালেও জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভের জেরে আউটডোর বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুপারস্পেশালিটি বিল্ডিংয়ের নীচে টেবিল, চেয়ার পেতে সিনিয়র চিকিৎসকরা রোগী দেখতে শুরু করেন। কিন্তু জুনিয়র চিকিত্সকদের বাধায় আধঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ করে দিতে হয়। আউটডোর পরিষেবা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছিল উত্তরবঙ্গ ও জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে। আজ, ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন কী হবে? আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ইমার্জেন্সি ও আউটডোরে কাজ করবেন না তাঁরা। এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি সামাল দিতে এদিন রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে তাঁদের উদ্যোগী হতে বলেন তিনি। 
  • Link to this news (বর্তমান)