• বিচার চেয়ে পাড়ায় পাড়ায় ‘রাতের দখল’ মহিলাদের
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা থেকে দিল্লি, মেচেদা থেকে মুম্বই। আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ‘রাতের দখল’ নিলেন মহিলারা। গর্জে উঠলেন আত্মসম্মান, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে। আন্দোলনের ঢেউ সীমাবদ্ধ থাকল না সুবিশাল ভারতবর্ষের সীমারেখার মধ্যেও! ছড়িয়ে পড়ল বিদেশে। লন্ডন, পোল্যান্ড সহ বিদেশের আরও নানা জায়গায় একযোগে কর্মসূচি পালিত হল। পথে নেমেই সোচ্চারে নিজেদের অধিকার দাবি করল ‘অর্ধেক আকাশ’। 

    আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে রিমঝিম সিনহা নামে এক পড়ুয়া কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৪ আগস্ট রাতে তিনি যাদবপুর মোড়ে মহিলাদের জমায়েতের ডাক দেন। সেই বার্তাই ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। তারপর রাজ্যজুড়ে এই কর্মসূচির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন জায়গায় মৌন মিছিল, ছোট সভা, প্রতিবাদী গান-কবিতার মতো নানা আঙ্গিকে শুরু হয় প্রতিবাদ। রাত ১২টা নাগাদ গান, স্লোগান সহযোগে রাস্তায় নামেন মহিলারা। আন্দোলনের আহ্বায়করা বারবার আবেদন করেছেন, কেউ রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে আসবেন না। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। কোথাও অটোচালক মহিলাদের রাতে বিনা খরচে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কেউ আবার আন্দোলনকারীদের কথা মাখায় রেখে রাতভর খোলা রেখেছেন কফি শপ বা রেস্তরাঁ। বিনামূল্যে লেডিজ স্পেশাল বাসের ব্যবস্থাও ছিল।    

    যাদবপুরে মহিলাদের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। এর পাশাপাশি অ্যাকাডেমি চত্বর, কলেজ স্ট্রিট, সিঁথির মোড়, গড়িয়া, হরিদেবপুর সহ একাধিক এলাকায় সমাবেশ হয়। সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে ছড়িয়ে যায় প্রতিবাদের আগুন। বারুইপুর, জয়নগরে রাতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন মহিলারা। তাঁদের কেউ গৃহবধূ, কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেই আবার পেশায় স্কুলশিক্ষিকা। চিকিৎসকরা প্রায় সবাই নেমেছিলেন পথে। প্রতিবাদে যোগ দিতে পিছিয়ে ছিলেন না পুরুষরা। মহেশতলার কুমোরপাড়া, ডাকঘর মোড়, নুঙ্গি মোড়, বাটা মোড়, বাটানগর, মোল্লার গেট, রামপুর নস্করপাড়া, আমতলা মোড়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কল্যাণীর তিন জায়গায়, চাকদহর দু’জায়গায় এবং হরিণঘাটায় ‘রাতের দখল’ নেন মহিলারা। হাওড়া ময়দান, উলুবেড়িয়া, রামরাজাতলা, কদমতলা পাওয়ার হাউস, মন্দিরতলা, আন্দুল রোডের হাঁসখালি পোল এলাকায় জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। হুগলির একাধিক এলাকায় মহিলারা জোট বেঁধে রাস্তায় নামেন। উত্তরপাড়ার সখের বাজার, উত্তরপাড়া কলেজের সামনে সমাবেশ হয়। চন্দননগরের নিত্যগোপাল স্মৃতি মন্দির, ফেরিঘাট ও সংলগ্ন স্ট্র্যান্ড রোড, চুঁচুড়ার পিপুলপাতি, শ্রীরামপুরের নেতাজি গার্লস স্কুল, সিঙ্গুর, আদিসপ্তগ্রাম, চণ্ডীতলার শিয়াখালা, কোন্নগরের বাটা মোড়ে একইভাবে সমাবেশ করেন মহিলারা। বনগাঁ ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় নীলদর্পণ প্রেক্ষাগৃহের সামনে মহিলাদের জমায়েত হয়। বাগদা, গাইঘাটার বিভিন্ন এলাকায় রাতে পথে নামেন মহিলারা। যাঁরা পথে নামতে পারেননি, তাঁদের বাড়ি থেকেই শঙ্খ বাজিয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানোর আবেদন জানানো হয়েছিল। আর জি করের ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এদিন যোধপুর পার্কে ধর্নার কর্মসূচি নেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। প্রকাশ্যেই অর জি করের বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দেন সাংসদ শান্তনু সেন। বাম আমলে বানতলায় ধর্ষণ ও খুন হওয়া অনিতা দেওয়ানের বাড়ির সামনে ধর্না ও সভা করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। 
  • Link to this news (বর্তমান)