নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: একসময় বঙ্গের মানচিত্রে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল সপ্তগ্রাম বন্দরের। ছিল ত্রিবেণী সঙ্গমের জৌলুস। কালের গতিকে সেসব হারিয়েছে। বাংলার অন্যতম অভিজাত জনপদ বংশবাটি। তারও ঐতিহ্য ক্ষয়াটে। শুধু বাঁশবেড়িয়া হয়ে কোনওরকমে টিকে রয়েছে। এককালের সে সমৃদ্ধ অতীতকে আর ফেরানো সম্ভব নয়। কিন্তু তার চিহ্ন তো সংরক্ষণ করাই যায়। সেই ভাবনা থেকেই বাঁশবেড়িয়া পুরসভা স্থানীয় ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজ এগিয়েও গিয়েছে অনেক। ইতিমধ্যেই ভারতীয় জাদুঘরের কলকাতা শাখার সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন পুরকর্তারা। তাঁদের দাবি, জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশবেড়িয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা হল হংসেশ্বরী মন্দির। তার কাছেই একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে জাদুঘরের জন্য। হংসেশ্বরী মন্দিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও বিদেশ থেকেও ভক্ত সমাগম হয়। তাই মনে করা হচ্ছে সেখানে জাদুঘর তৈরি হলে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার বাড়তি সুযোগ পাবে। তবে শুধু পর্যটক বা পর্যটন বৃদ্ধিই পুরসভার লক্ষ্য নয়। পুরকর্তারা চান, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী, সপ্তগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে ধরে রাখতে। তাতে গবেষক মহলের যেমন সুবিধা হবে তেমনি বাঁশবেড়িয়ারও গুরুত্ব বাড়বে। যা নানাভাবে ঐতিহবাহী জনপদকে উন্নত হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই হুগলি জেলার বলাগড়েই প্রথম ব্লকস্তরের আঞ্চলিক ইতিহাসের মিউজিয়াম তৈরি হয়েছিল। যা বাংলার ক্ষেত্রেও তর্কযোগ্যভাবে প্রথম। এবার সেই হুগলিতেই একটি পুরসভার উদ্যোগে আঞ্চলিক ইতিহাসের জাদুঘর তৈরির প্রয়াস শুরু হয়েছে। সেটিও পুরসভাগুলির নিরিখে প্রথম উদ্যোগ বলে পুরকর্তাদের দাবি। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী নিজে এই কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতকে এক ছাদের তলায় ধরতে চাইছি। স্থানীয় ইতিহাসের জাদুঘরে সমস্ত নথি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান মজুত রাখা হবে। পুরসভার তত্ত্বাবধানে তা পরিচালিত হবে। ভারতীয় জাদুঘরের কাছে সরকারিভাবে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই উপকরণ সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়েছে স্থানীয়স্তরে। জাদুঘরের জন্য ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষও কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ‘নকল’ সরবরাহ করবে। তারপর নিরাপত্তা সহ অন্যান্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হলে ‘আসল’ নমুনাও দেওয়া হবে। ফলে, গঙ্গাপাড়ের জনপদে বসেই তার ইতিহাসকে দেখতে পারবেন আধুনিক সময়ের বাসিন্দারা।