• ভগৎ সিংদের জন্য চুরি করা বন্দুক রাখা হয় পানিহাটির গোবিন্দ হোমে
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: পানিহাটির গোবিন্দ হোম যেখানে আছে সেখানে মঠ তৈরি করবেন বলে স্বামী বিবেকানন্দ এসেছিলেন। গঙ্গা লাগোয়া এই বাগান বাড়িতে দু’মাস কাটিয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। বাড়িটি ঐতিহাসিক। সেই বাগানবাড়ি যে বিপ্লবীদের গোপন আস্তানাও ছিল, তা বহু মানুষেরই অজানা। জানা যায়, কলকাতায় রড্ডা কোম্পানি থেকে চুরি যাওয়া বন্দুক ও কার্তুজের বড় অংশ এই বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে সে সব বন্দুক পৌঁছে গিয়েছিল ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, বাঘা যতীনদের কাছে। ব্রিটিশ পুলিস সোদপুরে বারবার তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু অস্ত্রের কোনও হদিশ তারা পায়নি।

    ১৯১৪ সালের ২৬ আগস্ট। কলকাতার বিবাদী বাগ থেকে রড্ডা কোম্পানির ৫০টি সেমি অটোমেটিক পিস্তল(সি-৯৬) ও ৪৬ হাজার মাউজার কার্তুজ(৭.৬৩ এমএম) চুরি হয়েছিল। কোম্পানির আধিকারিকরা চুরির ঘটনা বুঝতে পারেন ২৯ আগস্ট। ওই রাতেই ব্রিটিশ পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের। পুলিস চুরি যাওয়া বন্দুক ও গুলি খুব বেশি উদ্ধার করতে পারল না। বিপ্লবী নলিনীকিশোর গুহর লেখা ‘বাংলার বিপ্লববাদ’ সহ একাধিক বইয়ে পানিহাটির উল্লেখ আছে। জানা গিয়েছে, সশস্ত্র সংগ্রামের উত্তাল সময়ে বিপ্লবীদের প্রচুর অস্ত্রের প্রয়োজন। বাঘাযতীন তা সংগ্রহের দায়িত্ব দিলেন আত্মোন্নতি সমিতির বিপীনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়কে। সমিতি ও ঢাকা মুক্তি সঙ্ঘ একজোট হয়ে অস্ত্র চুরির পরিকল্পনা করে। বাছাই করা বিপ্লবীদের বেছে পৃথক দল গঠন হয়। রড্ডা কোম্পানির বিশ্বস্ত কর্মী তথা জেটি ক্লিয়ারিং ক্লার্ক শ্রীশ সরকার ছিলেন নীরব বিপ্লবী। তিনি খবর দেন জার্মান থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র আসছে। এরপর নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করে বাক্স বোঝাই কন্টেনার কাস্টমস থেকে কোম্পানির ওয়্যারহাউসে না নিয়ে গিয়ে তা বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কান্তি মুখোপাধ্যায়ের গোডাউনের সামনে আনলোড হল। এরপর অস্ত্র বোঝাই এক একটি বাক্স আট আনা ভাড়া দিয়ে পৌঁছল কলকাতার জেলিয়াপাড়ার এক বাড়িতে। তারপর দ্রুত অস্ত্র বণ্টনের কাজ শুরু করে দিল বিপ্লবীরা। কলকাতায় অস্ত্র থাকলে ধরা পড়ার ভয় তাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ পড়ল তখন। কলকাতার দু’নম্বর শ্রীদাম মুদি লেনের বিপ্লবী অতুলকৃষ্ণ ঘোষের পুরোহিত ছিলেন হরি ভট্টাচার্য। প্রথমে তাঁর বাড়িতে কিছু অস্ত্র রাখা হয়। হরিবাবুই পানিহাটির গোবিন্দকুমার হোমের খবর দেন। তখনও যদিও হোম তৈরি হয়নি। সেটি ছিল ময়মনসিংহের শেরপুরের জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর বাগানবাড়ি। সেখানকার পুরোহিত ছিলেন হরিবাবু। রাতের অন্ধকারে অস্ত্র গাড়িতে বোঝাই করে এনে এই বাগান বাড়ির হাফ কিলোমিটার আগে দাঁড় করিয়ে বস্তায় ভরে সাইকেলে চাপিয়ে বাগান বাড়ির মধ্যে ঢোকানো হয়। ইতিহাসবিদ ও গান্ধী গবেষক শেখর শেঠ বলেন, ভারতবর্ষের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে পানিহাটি গঙ্গার মতো। এখানকার খাদি প্রতিষ্ঠানটি মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্রের মতো দেশের সর্বস্তরের নেতাদের নীতি নির্ধারণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। একইভাবে আগরপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকা সশস্ত্র সংগ্রামের আঁতুড়ঘরের রূপ নেয়। ভরসা ও বিশ্বাস ছিল বলেই অত্যন্ত গোপনীয়তায় রড্ডা কোম্পানির বন্দুক ও গুলি আজকের গোবিন্দকুমার হোমে রাখা হয়েছিল। পরে তা বিভিন্ন বৈপ্লবিক দলের কাছে সরবরাহ হয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)