এই সময়: বাইরে তখন রাত দখলের দাবিতে আন্দোলন চলছে শহরজুড়ে। আর আরজি কর হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভিতরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দু’দলেরই দাবি নিহত তরুণী চিকিৎসকের ন্যায় বিচার। বাইরে-ভিতরে দু’দিকেই স্লোগান উঠছিল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। বুধবার রাত সওয়া ১২টার কিছু পরে বাইরের আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে একদল যুবক আচমকা ঢুকে পড়ে আরজি কর ক্যাম্পাসের ভিতরে।তাদের অনেকের হাতেই ছিল লাঠি, রড। অভিযোগ, ওই বহিরাগতদের একাংশ ‘হাসপাতালে চিকিৎসা কেন হচ্ছে না’ স্লোগান তুলতে তুলতে চড়াও হয় হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে অবস্থান আন্দোলনে বসে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের উপর। ভাঙা হয় আন্দোলনকারীদের মঞ্চ, ছিঁড়ে ফেলা হয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা পোস্টার-প্ল্যাকার্ডও।
এখানেই শেষ নয়, এই বহিরাগতরা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। উল্টে ফেলা হয় গাড়ি। এমনকী নিস্তার পায়নি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিও। চলে দেদার ভাঙচুর। প্রথমে পুলিশ কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকের অভিযোগ, পুলিশ এই বহিরাগতদের বাধাও দেওয়ার চেষ্টা করেনি। পরে পুলিশ ওই বহিরাগতদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়।
আরজি কর হাসপাতালের ভিতরে পরিস্থিতি রণক্ষেত্র। ইমার্জেন্সি যখন তছনছ করছে এই বহিরাগত বাহিনী, তখন ইমার্জেন্সিতে ডিউটিরত ডাক্তার-নার্সরা কার্যত প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ব্যারাকও। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ, ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। যদিও অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয় উর্দিধারীদের। বেশি রাতে হাসপাতাল চত্বরে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা।
তবে এ দিন রাতের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে— এই বহিরাগতরা কারা? কেনই বা তারা হামলা চালাল আন্দোলনকারীদের উপর? কোনও রাজনৈতিক ইন্ধন ছাড়া এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এমনকী, হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের যে সেমিনার রুমে ওই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন করা হয়, সেই অকুস্থলও অক্ষত আছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকে।
এই হামলা পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে বলেও মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। বহিরাগতদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও এই ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য কেউ এ কাজ করেছে। আমরা আবেদন করব, দয়া করে এর রাজনীতিকরণ করবেন না।’
আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদ-আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন শান্তনু। কিন্তু সেই চেষ্টা কারা করল, তার কোনও সদুত্তর তিনি দেননি।