• রাত দখলের আন্দোলনে উঠে এলো একাধিক দাবি
    এই সময় | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: স্বাধীনতা দিবসের আগে মধ্যরাত দখল করেছেন রাজ্যের মেয়েরা। প্রতিবাদের মূল সুর অবশ্যই আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি ও বিচারের দাবি। কিন্তু এর পাশাপাশি এই সমাবেশ থেকে একাধিক দাবিতে সরব হয়েছেন প্রতিবাদীরা। দশ দফা দাবি নিয়ে আগামীদিনে সরকার ও প্রশাসনের উপরেও তাঁরা চাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা হরণের যে সব মানসিকতা আজও রয়েছে তার বিরুদ্ধেও সমান ভাবে সরব হয়েছেন মেয়েরা।রাতের গণপরিবহণ

    যাদবপুরের পড়ুয়া অনুষ্ণা দাস এ দিন রাত দখলের কর্মসূচিতে ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘আমরা চাই রাতে সরকারি ও বেসরকারি গণপরিবহণ যেমন, বাস, ট্রেন, মেট্রো চালানো হোক। এই শহরে রোজ বহু মেয়েকে কাজের তাগিদে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়। বাস, ট্রেন, মেট্রো না থাকার কারণে অনেক সময়েই তাঁদের বাড়ি ফেরার সময়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। ঘটে যায় নানা নির্যাতন এবং অঘটন।’

    অল বেঙ্গল বাস মিনি বাস সমন্বয় সমিতির সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাতে তাঁদের তরফে বাস চালাতে কোনও অসুবিধে নেই। চালু রুট হাওড়া, শিয়ালদহের মধ্যে প্রায় সারারাতই বাস চলে। কিন্তু বাকি রুটে বাস চালাতে গেলে সরকারি সাহায্য ও ভর্তুকি দরকার। কারণ, যাত্রী না হলে বেসরকারি পরিবহনের খরচ তোলা সম্ভব নয়।

    বাস লার্ভাস সংগঠন বাসোপেডিয়ার তরফে এ দিন দুটি রুটে অনেক রাত পর্যন্ত বিশেষ বাস চালানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংগঠনের তরফে অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কোভিডের পরে সরকারি নাইট সার্ভিসও অনেক রুটে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা অবিলম্বে শুরু করা দরকার। এ দিকে মেট্রো রেলের তরফে এ দিনের জন্য বিশেষ ট্রেন রাত ১০টা ৪০ মিনিটে চালানো হলেও অন্যান্য দিন মেয়েরা ফিরবেন কী করে? আপাতত কোনও ব্যবস্থা-ই নেই মেট্রোর কাছে।

    রাতের শৌচালয়

    কলেজ স্ট্রিটে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন রূপা পাত্র। তিনি একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের হয়ে কাজ করেন। রূপার কথায়, ‘রাত আটটা বড় জোর ন’টার পর থেকে শহরের সুলভ শৌচালয়গুলি বন্ধ হয়ে যায়। শৌচালয়ের খোঁজে ঘুরে ঘুরেও কোনও সুরাহা মেলে না।’ এই জমায়েত থেকে দাবি উঠেছে রাতের শহরে সুলভ শৌচালয়গুলি সচল রাখার। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য। ঋতুস্রাবের সময়েও বহু মহিলা প্যাড পরিবর্তন করার আড়ালটুকু পান না।

    কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের বক্তব্য, সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শহরের শৌচালয়গুলি চালু থাকে। পুরসভা বর্তমানে ১১টি ওয়ার্ডে মহিলাদের কথা ভেবে একটি কমপ্লেক্স তৈরি করছে। যেখানে শৌচালয়ের পাশাপাশি ব্রেস্ট ফিডিং রুম, চেঞ্জিং রুম, রেস্ট রুমও থাকবে। কিন্তু রাত পর্যন্ত শৌচালয় খোলার দাবির বিষয়ে স্বপনের বক্তব্য, ‘রাতে যদি সেখানে কোনও রকম নির্যাতন বা মহিলাদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে তখন কী হবে?’

    সিলেবাসে চাই জেন্ডার ইকুয়ালিটি

    মেয়েদের এই সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে, একেবারে ছেলেবেলা থেকেই ছাত্রছাত্রীদের লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। যে কোনও নির্যাতন, নিগ্রহ ও অত্যাচারের ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে। মেয়েদের এবং প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা বোধ তৈরি করতে তাই দরকার স্কুলস্তরের সিলেবাস। রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারপার্সন উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এই দাবির সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত। ইতিমধ্যে সিলেবাসে এ ধরনের বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত করতে আপত্তি নেই।’

    রাতের শহরের নিরাপত্তা

    রাতের শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি পুলিশি নজরদারি দরকার বলে দাবি উঠেছে। পেশায় সঙ্গীতশিল্পী প্রিয়াঙ্কা বসু বলেন, ‘রাতে তো পুলিশকে শুধু লরির সামনেই দেখতে পাই। পুলিশ কিয়স্কগুলোও ফাঁকা থাকে। এখন তো কত আধুনিক হয়েছে পরিষেবা। পুলিশের উচিত অ্যাপের মাধ্যমে প্যানিক বাটন তৈরি করা, যাতে মেয়েরা বিপদে পড়লে সাহায্য পেতে পারে।’

    যাদবপুরের সমাবেশে হাজির সৌমিতা মজুমদারের বক্তব্য, ‘শুনেছিলাম রাতের শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুলিশ বিশেষ মহিলা বাহিনী তৈরি করেছে। তাঁরা কোথায় থাকে কখনও রাস্তায় তো দেখতে পাই না?’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) মিরাজ খালিদ বলেন,‘রাতের শহরে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত টহলদারি রয়েছে। মহিলা পুলিশ কর্মীরাও বিভিন্ন প্রান্তে টহল দেন।’ তাছাড়া, কোনও সমস্যার কথা জানিয়ে কেউ ১০০ ডায়ালে ফোন করলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্তা।
  • Link to this news (এই সময়)