• ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে সিবিআইকে স্পষ্ট বার্তা মমতার
    এই সময় | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তভার মঙ্গলবারই হাতে নিয়েছিল সিবিআই। এই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে বুধবার কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে এই কেন্দ্রীয় এজেন্সি। আর এই তদন্তের জন্য এ দিনই সিবিআইকে ডেডলাইন বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আগামী রবিবারের মধ্যেই মূল অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাইছেন তিনি। যদি সিবিআই অভিযুক্তকে এই সময়সীমার মধ্যে সাজা দিতে না-পারে, তাহলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গোটা রাজ্যে আন্দোলনে নামার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। গত সোমবার নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তদন্ত শেষ করার জন্য টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

    আগামী রবিবারের মধ্যে কলকাতা পুলিশ এই ধর্ষণ-খুনের ঘটনার কিনারা করতে না-পারলে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে অভিযুক্তের বিচার করে দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবারই এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

    কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে এই মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি-প্রমাণ তুলে দিয়েছে লালবাজার। তবে সিবিআইয়ের জন্যও যে ভাবে টাইমফ্রেম বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বুধবার বেহালায় প্রাক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের টার্গেটেড টাইম ছিল রবিবার পর্যন্ত, তাই আমরা চাই, এই রবিবারের মধ্যে তারা (সিবিআই) কেস করে ফাঁসি দেবে। আমি বালুরঘাটের একটি কেসে তিন দিনে চার্জশিট করিয়ে দিয়েছিলাম। কামদুনিতে আমরা দু’জনের ফাঁসির কথা বলেছিলাম। কিন্তু হাইকোর্ট ফাঁসি মকুব করে দেয়। আমাদের দিক থেকে কোনও ত্রুটি ছিল না।’

    এর আগে মমতা জানিয়েছিলেন, আরজি করের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত সম্পূর্ণ করার জন্য কলকাতা পুলিশের সব থেকে দক্ষ অফিসারদের নেতৃত্বে টিম তৈরি করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। তারপরেও হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ায় এই মামলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে সবরকম সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন মমতা।

    তাঁর কথায়, ‘আমরা রবিবার পর্যন্ত টাইম নিয়েছিলাম। ৩৪ জনকে পুলিশ ডেকে কথা বলেছিল বলে শুনেছি। কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারদের তারা ডেকেছিল। ওদের লিস্টে আরও অনেকে ছিল। এই চার-পাঁচ দিনে মধ্যে তাদেরও ডেকে পুলিশ কথা বলত। সেই সুযোগ পুলিশকে দেওয়া হয়নি। এখন তো কোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে কেস। আমরা এভিডেন্স, কাগজপত্র সব তুলে দিয়েছি। কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা দিতে রাজি রয়েছি। কিন্তু দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে। দোষীদের আড়াল করা চলবে না।’

    এই ধরনের স্পর্শকাতর মামলায় বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের এগোতে হয় বলেও মমতা মনে করছেন। তাঁর যুক্তি, কোনও ভাবে নির্দোষ কারও যাতে সাজা না-হয়, তা সব সময়ে মাথায় রাখতে হয়। এই প্রসঙ্গে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির ঘটনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন মমতা। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় ধনঞ্জয়কে ফাঁসি দেওয়ার জন্য সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ প্রবল সওয়াল করেছিল। বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্যও সেই সময়ে ফাঁসির দাবিতে পথে নেমেছিলেন। যদিও ধনঞ্জয় প্রকৃত অপরাধী কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

    তাই মমতা এ দিন বলেছেন, ‘ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের কেস তো দেখেছেন। যে সাক্ষী ছিল, সে এখন বলছে, আমি পাপ বোধ করছি। আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ও দোষী ছিল না। যে দোষ করল, তাকে সে দিন বামফ্রন্ট সরকার মদত দিয়েছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাঁর স্ত্রী সে দিন ডোরিনা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ধনঞ্জয়ের ফাঁস চাই। তার ফাঁসি হয়ে গেল।’

    মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে সেই সময়ে মহম্মদ সেলিমও মিছিলে ছিলেন। মমতার সমালোচনার মুখে এ দিন সেলিম বলেন, ‘উনি সঞ্জয়কে নিয়ে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন বলেই ধনঞ্জয়ের উদাহরণ দিয়েছেন। সন্দীপ ঘোষ, বিনীত গোয়েলদের দিয়ে এই স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলেন। এখন নজর ঘোরাতে ধনঞ্জয়কে টেনে আনছেন।’

    যদিও মমতার যুক্তি হলো, এই বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেক সতর্ক হয়ে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে সাজা দিতে হয়। সেই কাজ কলকাতা পুলিশ দ্রুত গতিতেই করছিল। সাম্প্রতিক কালে রাজ্য পুলিশই বাংলাদেশের এমপি খুনের মামলার কিনারা করেছে। বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণের কিনারা করতেও কলকাতা পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।

    সেই জায়গায় সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সাকসেস রেট নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অনেক দিন ধরেই সন্দিহান। সেই সিবিআইয়ের হাতেই আরজি করের মামলা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা যদি রবিবারের মধ্যে এই খুন ও ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি করতে না-পারেন, তা হলে সারা রাজ্যে টানা আন্দোলন করবে তৃণমূল। দলের উদ্দেশে মমতার নির্দেশ, ‘১৯ তারিখের পর থেকে প্রতিটি ব্লকে দোষীর শাস্তি দাবিতে তৃণমূল রাস্তায় নামবে। কেউ ধর্না করবেন, কেউ মিছিল করবেন, কেউ মিটিং করবেন।’
  • Link to this news (এই সময়)