• কর্মবিরতিতে সিনিয়ররাও, সব হাসপাতালের পরিষেবা শিকেয়
    এই সময় | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: গত কয়েক দিন ধরে পেটের যন্ত্রণা হচ্ছিল ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী তন্নিষ্ঠা মিত্রের। বুধবার সকালে তাকে নিয়ে স্থানীয় কালীঘাট, ভবানীপুর এলাকার একাধিক চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েছিলেন বাবা প্রসেনজিৎ মিত্র। কিন্তু কোথাও ক্লিনিক খোলা ছিল না। ভাবতে পারেননি, একই অভিজ্ঞতা হবে এসএসকেএমের মেডিসিন আউটডোরে এসে।ভোরবেলা থেকে একাধিক বার খিঁচুনি হওয়ায় স্বামী নিরঞ্জন হালদারকে বানতলা থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে এসেছিলেন শম্পা হালদার। সেখানে আউটডোর বন্ধ থেকে এনআরএস হাসপাতালে আসেন তাঁরা। কিন্তু সেখানে আউটডোর কমপ্লেক্সে গেটে তালাই খোলা নেই!

    চুম্বকে এটাই গোটা রাজ্যের ছবি ছিল এ দিন। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে এতদিন জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে রোগীদের ভোগান্তি চলছিলই। তবে সিনিয়র ডাক্তারদের কল্যাণে বন্ধ হয়ে যায়নি রোগী পরিষেবা। তবে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সেই কর্মবিরতিতে সামিল হন সিনিয়র ডাক্তাররাও। তাতে বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতা- সর্বত্রই মুখ থুবড়ে পড়ল সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আউটডোর পরিষেবা। আউটডোরের একাংশের ভিড় ইমার্জেন্সিতে আছড়ে পড়ায় জরুরি বিভাগেও ছিল হাঁসফাঁস দশা।

    ঠিক যেমন তন্নিষ্ঠা আর নিরঞ্জন। তাঁদের যথাক্রমে এসএসকেএম এবং এনআরএসের ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার দেখেছেন শেষ পর্যন্ত। তবে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভর্তি করা যাবে না। পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের 'আউটডোর বন্ধে'র ডাকে এ দিন সরকারি হাসপাতালের ৯০% জায়গাতেই বসেনি আউটডোর। বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর ষোলো আনাই ছিল বন্ধ। ফলে চরম ভোগান্তি হয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরিব রোগীদের।

    উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার শ্রীকান্ত মণ্ডল তাঁর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলে রাজুকে রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন এনআরএসে। কিন্তু হেমাটোলজি বিভাগের আউটডোরই খোলেনি। পেশায় দিনমজুর শ্রীকান্তের কথায়, 'গরিব মানুষ আমরা। অযথা ২০০-২৫০ টাকা খরচ হলো, অথচ কাজটাও হলো না। আবার একদিন কাজ কামাই করে ছেলেকে আনতে হবে রক্ত নিতে।'

    মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা রোশনারা বেগমকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগ থেকে রেফার করা হয়েছিল এসএসকেএম অথবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি বিভাগের আউটডোরে। কিন্তু দু'জায়গাতেই আউটডোরে ডাক্তার দেখতে না পেয়ে হতাশ রোশনারা।

    অনেক জায়গায় ইমার্জেন্সি খোলা থাকলেও ও সেখানে ডাক্তার থাকলেও সব রোগীকে সেখানে দেখা হয়নি। দেখা হয়েছে বাছাই করা ৫% রোগীকেই, যাঁদের অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন।

    রাজ্যের প্রায় সর্বত্র ছবিটা মোটের উপর একইরকম হলেও এ দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে কোনও প্রভাব পড়েনি। কিছুটা দেরি হলেও সমস্ত বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকেরা সেখানে রোগী দেখেছেন। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও রোগী দেখেছেন। তাঁর কথায়, 'আমরা আউটডোরে পরিষেবা বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম। সবাই এসেছেন। হয়তো সামান্য বেশি সময় লেগেছে। তবে সব বিভাগে পরিষেবা একেবারেই স্বাভাবিক ছিল।'
  • Link to this news (এই সময়)