এই সময়, বহরমপুর: পুলিশ-পরিযায়ী শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধে বুধবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদ। বুধবার সামশেরগঞ্জের বাসুদেবপুর ও সুতির সাজুর মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় হাজার খানেক পরিযায়ী শ্রমিকরা। ঘণ্টা চারেক অবরোধের ফলে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। পুলিশ অবরোধ তুলতে এলে দফায় দফায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। পাল্টা কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ করে পুলিশ। জঙ্গিপুর জেলা পুলিশ সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘এই ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।’
এ দিন অবরোধে সামিল হওয়া পরিযায়ী শ্রমিক আকতারুল শেখ বলেন, ‘ওডিশায় কাজ করতে গিয়ে আমাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। আধার কার্ড দেখালেও জাল বলে রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এলাকায় কাজ থাকলে আমরা এই সমস্যায় পড়তাম না। আমাদের কাজের ব্যবস্থা করা হোক।’
জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি জেলা প্রশাসন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জানিয়েছি। যাঁরা ওডিশা থেকে ফিরে এসেছেন বা আসতে চাইছেন তাঁদের সমস্ত সহযোগিতা করা হবে।’
মুর্শিদাবাদ জেলায় বড় কোনও শিল্প নেই। ১০০ দিনের কাজও সেভাবে মিলছে না পঞ্চায়েতে। রোজগারের তাগিদে ওডিশার বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রি বা হকারির কাজে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার শ্রমিকরা। অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহে মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের হেনস্থা করা হয় ওডিশার বিভিন্ন জায়গায়। আতঙ্কে ওডিশা থেকে মুর্শিদাবাদে ফিরে এসেছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
শুধু সামশেরগঞ্জ নয়, গত কয়েকদিনে হরিহরপাড়া, লালগোলা, সুতি ও জঙ্গিপুরে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার খবর পেয়ে কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেও অত্যাচার কমেনি। এ দিন কাজের দাবিতে ওডিশা থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা সামশেরগঞ্জ থানার বাসুদেবপুর ও সুতি থানার সাজুর মোড়ে পথ অবরোধ করেন।
প্রথমে সুতির সাজুরমোডে অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। মিরাজুল শেখ নামে এক পুলিশকর্মী আহত হন। এর পর বাসুদেবপুরে অবরোধ তোলার জন্য পুলিশ গেলে ফের গন্ডগোল শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করেন অবরোধকারীরা। পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
সেই সময়ে ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ওডিশার একটি তুলো বোঝাই গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পরে সমস্ত তুলো লুট করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারী পরিযায়ী শ্রমিক মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামে কোনও কাজ নেই। সেই কারণে আমরা পরিবার ছেড়ে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও হেনস্থার শিকার হয়ে আতঙ্কে কাজ ফেলে আমরা পালিয়ে এসেছি। এখন পেট চলবে কী করে?’
অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাজ্যে অত্যাচারের প্রতিবাদে এ দিন পাঁশকুড়ার বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দেন ওডিশা থেকে ফিরে আসা শতাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, এ রাজ্য থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘পাঁশকুড়ার ৫-৭ হাজার মানুষ ওডিশায় বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। ওই রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে অত্যাচার বেড়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’