• ‘মমতা সরকারের পতনের শুরু’, দুর্নীতির আঁচে তপ্ত বাংলায় ক্ষোভ বাড়াল RG কর কাণ্ড
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১৫ আগস্ট ২০২৪
  • ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পতনের শুরু হল’- বুধবার মধ্যরাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তাণ্ডবের খবরটা এসে পৌঁছাতে যাদবপুর এইট-বি বাসস্ট্যান্ডের দিকে হেঁটে যাওয়া কয়েকজনের কথোপকথনে কান পাততে এমনই শোনা গেল। কয়েক হাত দূরেই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে হেঁটে যেতে-যেতেই একজন প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘আজ মহিলাদের রাত দখল কর্মসূচিতে কি লাভ হল?’ সেই প্রশ্ন শুনে ৩০-র কোঠায় থাকায় এক মহিলা আবার বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে আনলেন। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশে এরকমভাবেই একটু-একটু করে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল। সেটাই পরে বড় আকার নিয়েছিল।’ সেইসঙ্গে তিনি যোগ করলেন, আজ রাত থেকেই হয়তো পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সূচনা হল।

    যদিও প্রাথমিকভাবে যাদবপুরের এইচ-বি বাসস্ট্যান্ডের জড়ো হওয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাও প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ‘মনোভাব’ ছিল না। বিক্ষিপ্তভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিরোধী স্লোগান দেওয়া হলেও সেরকম সার্বিকভাবে সেই বিষয়টি থেকে নিজেদের দূরে রেখেছিলেন অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। হয়তো সচেতনভাবেই।

    তেমনই একজন বলেন, ‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে যা ঘটল, তা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেটার জন্য এখনই পদক্ষেপ করতে হবে। আমি বেঁচে থাকার সময় সেটা দেখতে পাব কিনা, জানি না। কিন্তু একদিন তো শুরুটা করতেই হত। আজ সেই পরিবর্তনের সূচনা হল। হয়ত আমার পরবর্তী প্রজন্ম সেই পরিবর্তন চাক্ষুষ করতে পারবে।’

    তারইমধ্যে যাদবপুরের এইচ-বি বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ফোনের নেটওয়ার্ক চলে যেতেই ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায়। জমায়েতের মধ্যে থেকেই কেউ-কেউ বলতে থাকেন, ‘জ্যামার বসিয়ে দিল।’ পুলিশ অবশ্য জানায়নি যে জ্যামার বসানো হয়েছিল। কিন্তু যাদবপুর থানার কাছাকাছি না যাওয়ার আগে অধিকাংশ মানুষের ফোনে আর ‘নেটওয়ার্ক’ মেলেনি। হাজার চেষ্টা করেও ফোন করা যায়নি। নেট তো চালুই করা যাচ্ছিল না। ফলে লাইভও করতে পারেননি তাঁরা। তাতে বেশ চটে যান সাধারণ মানুষ।

    তারইমধ্যে মিছিলের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে যাদবপুর থানার কাছে পৌঁছানোর পরে অনেকে জানতে পারেন যে আরজি কর হাসপাতালে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। আর সেটা শুনেই অনেকের চোখেই সরাসরি ‘ভিলেন’ হয়ে যায় তৃণমূল সরকার। তাঁরা অভিযোগ করতে থাকেন যে ‘রাত দখল’ কর্মসূচি থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এবং আন্দোলন রুখে দিতেই তৃণমূলের মদতে আরজি কর হাসপাতালে তাণ্ডব চলেছে । 

    আরজি কর হাসপাতাল থেকে যাদবপুর থানার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার হলেও অধিকাংশই সেই অভিযোগ করতে থাকেন। একজন ক্ষোভে ফুঁসতে-ফুঁসতে বলেন, ‘মমতার সরকারের পতনের শুরু হল।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, আরজি করের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সন্দীপ ঘোষকে কেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হল? 

    তাঁর মতে, ওই ঘটনার পরই তো রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেইসঙ্গে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতির কারণেও রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত তৃণমূল সরকারের উপরে ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ওই ব্যক্তি। 
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)