• গলসির চান্না গ্রামে খড়ি নদীর ধারে আশ্রমই ছিল বিপ্লবীদের আখড়া
    বর্তমান | ১৬ আগস্ট ২০২৪
  • সুদীপ পাল, মানকর: চারদিক গাছে ঘেরা। গলসির চান্না গ্রামে খড়ি নদীর ধারে আশ্রমটির পরিবেশ এখন শান্ত। কিন্তু একসময় এখানেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হতো। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত, ভগৎ সিংহের ঘনিষ্ঠ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৭সাল নাগাদ আশ্রমটি তৈরি করেন।

    জানা যায়, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ থেকে উজ্জীবিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন যতীন্দ্রনাথ। একসময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটানোর বাসনা নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘যতিন্দর উপাধ্যায়’ নামে গায়কোয়াড় রাজার এক সৈনিকের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। উত্তর-পশ্চিম ভারতে বিভিন্ন উপজাতিদের ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন। কলকাতার মুরারিপুকুরে ব্রিটিশের উপর বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন যুবক যতীন্দ্রনাথ। পরে গদর পার্টির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র স্থাপিত হয়। সেখানেই কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। মুক্তিলাভের পর ১৯০৭সালে চান্নায় আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সন্ন্যাস গ্রহণ করে নতুন নাম হয় নিরালম্ব স্বামী। বিপ্লবীদের আখড়া হয়ে উঠেছিল এই আশ্রম। এখানে একসময় এসেছিলেন ভগত সিং, তাঁর বাবা কিষেণ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, লালা লাজপত রায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষ, বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব। এখানে থেকে তাঁরা বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। গলসির বাসিন্দা নিরুপম দাস বলেন, বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথের একাধিক দুরন্তপনার নানা ঘটনা এখনও জনশ্রুতির মতো রয়ে গিয়েছে। আমরা শুনেছি তাঁর বাবা কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁকে শান্ত করতে মহীনগর শ্মশানে আসা এক কালী সাধকের কাছে তাঁকে নিয়ে যান। সাধুবাবা একটি রক্ষাকবচও দিয়েছিলেন। যতীন্দ্রনাথ নাকি সাধুকে বলছিলেন, শুনেছি বুলেট আপনাকে স্পর্শ করে না? সাধুর জবাব, ছিল ‘হ্যাঁ।’ তখন যতীন্দ্রনাথ লুকনো একটি পিস্তল বের করে সাধুর দিকে তাক করে চালাতে উদ্যত হন। প্রাণভয়ে সাধু দৌড়ে পালিয়ে যান।

    আশ্রম করার জন্য এই পরিবেশ বেছে নেওয়া হল কেন? চারদিকে গাছের আড়াল। ফলে পুলিসের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য আশ্রমের মধ্যে একটি বটগাছের তলা বেছে নেওয়া হয়। সেটিই ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। গলসির বাসিন্দা, স্বাধীনতা সংগ্রামী ফকিরচন্দ্র রায় তখন নিয়মিত আসতেন আশ্রমে। তাঁর কাজ ছিল, গোপনে চিঠি আদান-প্রদান করা। একইসঙ্গে পুলিসের গতিবিধির উপরও নজর রাখতেন।

    চান্না আশ্রম কমিটির পক্ষে অমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৭৩সাল থেকে আমি এই আশ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। বহু বিপ্লবীর স্মৃতিধন্য এই আশ্রম। আমাদের সীমিত ক্ষমতায় আশ্রম রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করছি। তবে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত ভুলতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। স্থানীয় শিক্ষক ফিরোজ আলি কাঞ্চন বলেন, অগ্নিযুগের আশ্রমটি আজ প্রচারের আলো থেকে অন্তরালে। আশ্রমের খড়ের চাল নষ্ট হচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আশ্রমের ঘরটির দেওয়াল ভেঙে পড়ছে। আশ্রম রক্ষা করতে প্রশাসন এগিয়ে আসুক।
  • Link to this news (বর্তমান)