আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় রাজ্য তো বটেই, সারা দেশেও চাপে তৃণমূল এবং তৃণমূল পরিচালিত সরকার। বুধবারের ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচির সমর্থনে কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতার পাশাপাশিই সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিদেশেরও কিছু বড় শহরে ভিড় জমেছিল। সেই পরিস্থিতিতেই আসরে নামলেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বৃহস্পতিবার রাতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ একটি ভিডিয়ো তাঁর এক্স হ্যান্ডলে টুইট করেছেন। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আরজি করের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ন্যায্য।’’ তবে পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার সবসময় পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। সরকার বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে যে তত্ত্ব উঠে আসছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
ঘটনাচক্রে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে যে ভাবে ওই পদ ছাড়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে ‘পুনর্বাসন’ দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে জনমানসে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছিল। কারণ, ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এমনও অভিযোগ ছিল যে, তিনিই নাকি গোটা ঘটনা ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছিল। সেই বিক্ষোভের কারণেই তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালে তাঁর নবলব্ধ পদে যোগ দিতে পারেননি। তার পরদিনই কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে ১৫ দিনের ছুটিতে যেতে বাধ্য করে। মহুয়া তাঁর ভিডিয়োয় কারও নাম না করলেও আরজি করের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’-দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে ‘ন্যায্য’’ বলে মেনে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মহুয়া ওই ভিডিয়োটি করেছেন ইংরেজিতে। অর্থাৎ, তাঁর লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা। যাঁরা আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে এবং নির্যাতিতার জন্য বিচার চাইতে শুরু করেছেন। ওই ঘটনার পরে এমনিতেই তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা ‘চাপে’ রয়েছেন। সেই আবহেই মহুয়ার বৃহস্পতিবারের ভিডিয়ো। সেখানে তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, “রাস্তায় যে প্রতিবাদ চলছে, তা আমরা বুঝি। এই ভয়, এই নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা পুরোটাই সত্যি। এটা আমার সঙ্গেও হতে পারে, আপনার সঙ্গেও হতে পারে, যে কারও সঙ্গে হতে পারে। অন্তত কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাটুকু আমরা আশা করতে পারি। যাঁরা নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা আছি।”
ঘটনার পর থেকে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তত্ত্ব ঘুরতে শুরু করেছে। ভিডিয়ো বার্তায় মহুয়া তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মহিলাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে দেশের মধ্যে কলকাতা যে সবচেয়ে ‘সুরক্ষিত শহর’, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদ।
ঘটনার পর থেকে কী কী হয়েছে, তা ভিডিয়ো বার্তায় তুলে ধরেছেন মহুয়া। তিনি জানান, যখন আরজি করের ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে ছিলেন। খবর পেয়েই তিনি মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখাও করেন। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করেছিল মূল অভিযুক্তকে। প্রসঙ্গত, মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় অভিযুক্তের গ্রেফতারির পর থেকেই আন্দোলনকারীরা দাবি করে আসছিলেন, ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন। মহুয়ার পাল্টা বক্তব্য, এখন গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে ডিএনএ-র নমুনা পরীক্ষার উপর। যা সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষিত আছে। তিনি বলেছেন, “ফরেন্সিক প্রমাণ কিংবা সিসিটিভি প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা অসম্ভব।”
মহুয়ার আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মৃতার পরিবারকে বলেছিলেন, তাঁরা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না হলে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে। এখন হাই কোর্ট তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ সিবিআইকে সব রকম সাহায্য করছে। পুলিশ কোথাও কিছু গোপন করেনি।”