দ্রুত আর জি কর কাণ্ডের রহস্যভেদে মরিয়া CBI, নজরে পুলিশ থেকে চিকিৎসক
প্রতিদিন | ১৬ আগস্ট ২০২৪
অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী খুন ও ধর্ষণের তদন্তে সিবিআইয়ের নজরে চিকিৎসক ও পুলিশ। তদন্ত শুরু করার পরই সিবিআই শুরু করেছে তলব। বৃহস্পতিবারই পর পর কয়েকজন চিকিৎসককে তলব করে জেরা করা হয়। সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে উত্তর কলকাতার টালা থানার ওসিকে। এই টালা থানার আওতায় পড়ে আর জি কর হাসপাতাল। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, এবার আধিকারিকদের নজরে রয়েছেন আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষও। এ ছাড়াও টালা থানা ও গোয়েন্দা বিভাগের কয়েকজন আধিকারিককেও সিবিআই তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এমনকী, লালবাজারের কয়েকজন পুলিশকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন সিবিআই আধিকারিকরা। তবে এদিন যাঁদের তলব করে জেরা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেককেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে তলব করে জেরা করা শুরু হয়েছিল। হাই কোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার খবর লালবাজারে আসার পরই জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করে দেন এই খুন ও ধর্ষণ মামলার জন্য গঠিত হওয়া বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’-এর আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের ২০ জন আধিকারিক একসঙ্গে তদন্ত শুরু করেছেন। তার জন্য চার থেকে পাঁচটি টিমে ভাগ হয়ে কাজ করছেন আধিকারিকরা। এই টিমের একটি বড় অংশই দিল্লি থেকে এসেছে। এ ছাড়াও সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের কয়েকজন আধিকারিকেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এদিন সিবিআইয়ের একটি টিম উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে ওই তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে যায়। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা চিকিৎসকের মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলেন। প্রথম থেকেই মা ও বাবা কিছু অভিযোগ তোলেন। তাঁদের মেয়ের উপর নির্যাতনের পিছনে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ছাড়াও আরও কয়েকজন রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ওই হাসপাতালেরই কয়েকজন চিকিৎসক তথা ইন্টার্নের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। তাই তাঁরা কাউকে সন্দেহ করেন কি না সিবিআই তা জানার চেষ্টা করে। সিবিআই এ-ও অভিভাবকদের কাছে জানতে চায় যে, তাঁদের মেয়েকে কেউ কোনও হুমকি দিচ্ছিল কি না অথবা সেরকম কোনও তথ্য তাঁদের মেয়ে জানিয়েছিলেন কিনা। এদিন তাঁরা অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনাও করেন।
এদিন সিবিআইয়ের অন্য একটি টিম আরজিকর হাসপাতালে যায়। সিবিআই আধিকারিকরা এদিনও হাসপাতালের সেমিনার হলে যান। সকালেই তাঁরা হাসপাতালে তাণ্ডবের খবর পান। তাঁরা জানতে পারেন যে, সেমিনার হল বা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি দুষ্কৃতীরা এসেছিল। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সিবিআই আধিকারিকরা এদিনও সেমিনার হলে যান। সূত্রের খবর, বুধবার রাতে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকে তথ্য বা প্রমাণ নষ্ট করতে পারেনি। তাঁরা হলের ভিতর গিয়েও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখেন। ইতিমধ্যেই সঞ্জয়কে জেরা করে হাসপাতালের যে জায়গাগুলিতে তার সবথেকে বেশি যাতায়াত ছিল, সেখানেই যান সিবিআই আধিকারিকরা। ওই জায়গাগুলি খতিয়ে দেখেন।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসকদের জেরার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন আধিকারিকরা। তাই এদিনই আটজন ডাক্তারি ছাত্রকে সিজিও কমপ্লেক্সে জেরা করা হয়। ওই আটজনের মধ্যে কয়েকজন ঘটনার রাতে মহিলার সঙ্গে ডিউটি করেন। আবার অন্য কয়েকজন ছাত্র, যাঁদের সঙ্গে ঘটনার দিন তরুণীর কথা হয়েছিল, তাঁদেরও জেরা করা হয়। এদিন চেস্ট বিভাগের প্রধান, এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, যিনি নির্যাতিতার পরিবারের লোকেদের ফোন করে বলেছিলেন, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তাঁকেও জেরা করা হয়। এ ছাড়াও আরও অন্য চিকিৎসকরা রয়েছেন সিবিআইয়ের তালিকায়। টালা থানার ওসিকে সিবিআই জিজ্ঞাসা করে যে, কখন খবর পেয়ে পুলিশ এসেছিল? পুলিশ কী অবস্থায় তরুণীর দেহ দেখে কী কী পদক্ষেপ নেয়। এ ছাড়াও টালা থানার অন্য আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদেরও তলবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।