মেয়েদের রাত দখলের রাতে বর্ধমানে খুন তরুণী, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিট গঠন করল জেলা পুলিশ
আনন্দবাজার | ১৬ আগস্ট ২০২৪
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘মেয়েদের রাত দখলের’ রাতেই এক তরুণীকে গলা কেটে খুনের অভিযোগ ওঠে পূর্ব বর্ধমানের নান্দুরে। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত ধরার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। তবে ধর্ষণের অভিযোগকে মান্যতা দেয়নি পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডে ধর্ষণ বা শারীরিক নিগ্রহের কোনও ইঙ্গিত ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পাওয়া যায়নি।’’ তিনি আরও জানান, এখনও ওই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। কোনও অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। তবে দ্রুত দোষীকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে দেন পুলিশ সুপার। একইসঙ্গে এই ঘটনাকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা বলে সমাজমাধ্যমে যে প্রচার করছেন কেউ কেউ, সে সম্পর্কে সতর্ক করে দেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি কোনও কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে এই ঘটনা ঘটেছিল বলে যে প্রচার হচ্ছে— সেটাও অসত্য।’’
বুধবার রাতেই তরুণীর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয় পূর্ব ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নান্দুরে। তিনি দু’বছর আগে বেঙ্গালুরুর শপিং মলে কাজ করতে যান। দু’দিন আগে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য নিজের ঘর থেকে বার হন। কিন্তু অনেক ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও ফিরে-না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবার। তার পর বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তরুণীর গলা কাটা দেহ পাওয়া যায়। ওই মামলা নিয়ে পুলিশ সুপার জানান, তদন্তের প্রথমার্ধে পুলিশের কাছে কোনও ‘ক্লু’ ছিল না। রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। অনুমান করা হচ্ছে, আততায়ী খুন হওয়া তরুণীর পূর্ব পরিচিত। তাঁকে চিহ্নিতও করা গিয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনও কারণ থেকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে ঘাতক। তবে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। পাশাপাশি, এই খুন পূর্বপরিকল্পিত না কি, তৎক্ষনাৎ কেউ ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। আপাতত অনুমান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক জন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অপরাধীকে দ্রুত ধরার সব রকম চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি পুলিশ সুপার।
অন্য দিকে, ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেলেও এখনও গ্রেফতার না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবার। তাদের দাবি, দ্রুত কাজ-না হলে সিবিআই তদন্ত চাইবে পরিবার। মৃতার বাবা বলেন, ‘‘এই ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারলাম না। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ ১২ ঘণ্টা সময় চেয়েছিল গতকাল (বৃহস্পতিবার)। যদি কোনও বিহিত না-হয়, তবে আদিবাসী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসব। দরকার হলে সিবিআই তদন্ত চাইব।’’ শুক্রবার মৃতার বাড়িতে যান রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী সেলের চেয়ারম্যান দেবু টুডু। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি আমাদের মেয়ের মতো। তার খুনে অভিযুক্তেরা শাস্তি পাবেই। পুলিশের উপর আস্থা রাখতে হবে। দোষীরা সাজা পাবে।