• মেট্রো স্টেশনে রূপান্তরকামীর বুকে হাত জওয়ানের, অভিযোগে বিদ্ধ RPF
    এই সময় | ১৭ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হতে গিয়ে নিগ্রহ-হেনস্থার শিকার হতে হলো দুই রূপান্তরকামী মহিলাকে। তাও খাস কলকাতা শহরের একটি মেট্রো স্টেশনে! আরজি করের ঘটনায় অ্যারেস্ট হয়েছে কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ার। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ সেই ‘রক্ষক’-এর বিরুদ্ধেই। নির্যাতিতা রূপান্তরকামী মহিলার অভিযোগ, রবীন্দ্র সদন স্টেশনের মধ্যে আরপিএফের এক জওয়ান তাঁর বুকে হাত দেন।জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা আসল না নকল? ওজন কত?’ এই ঘটনা ঘিরে স্বাধীনতা দিবসে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদীরা। প্রচুর সাধারণ যাত্রীও বিক্ষোভে সামিল হন। এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মেট্রো রেলের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের ভূমিকা। ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা।

    প্রতিবাদীদের দাবি, তাঁদের চাপের মুখে পড়ে লিখিত ভাবে এক আরপিএফ জওয়ান এই ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। সেই লিখিত বয়ানে রবীন্দ্র সদন স্টেশনের একটি স্ট্যাম্পও দেখতে পাওয়া গিয়েছে।

    স্বাধীনতা দিবসের দিন রবীন্দ্র সদন চত্বরে বিকেলে একটি প্রতিবাদী জমায়েত ছিল। সেখানে রূপান্তরকামী বহু মানুষ যোগ দেন। অভিযোগ, সন্ধ্যা ছ’টা-সাড়ে ছ’টা প্রতিবাদী রূপান্তরকামীদের জনা তিনেক আরজি কর হাসাপাতালে যাবেন বলে রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনে আসেন। এক নির্যাতিতার বক্তব্য, ‘আমরা মেট্রো স্টেশনে যেতেই প্রথমে এক মহিলা আরপিএফ আমাদের আটকান। তিনি বলেন, আপনাদের স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

    আমরা জিজ্ঞাসা করি কেন? তখন উনি বলেন, উপর মহলের নির্দেশ রয়েছে। আমরা জানতে চাই, কে উপর মহল, কোন অর্ডারের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে ঢুকতে দেওয়া হবে না?’ এই নিয়ে যখন বাগবিতণ্ডা চলছে সেই সময়ে এক পুরুষ আরপিএফ জওয়ান এগিয়ে এসে তাঁর বুকে হাত দেন। নির্যাতিতার কথায়, ‘অসীম ঘোষ নামে এক আরপিএফ জওয়ান আমার বুকে হাত দেন এবং বলেন, এটা আসল না নকল? ওজন কতো!’

    আরও এক রূপান্তরকামী প্রতিবাদে এগিয়ে এলে তাঁরও বুক লক্ষ্য করে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। রূপান্তরকামী সমাজকর্মী বন্যা করের বক্তব্য, ‘এমন নোংরামির প্রতিবাদে আমাদের সঙ্গীরা তেড়ে গেলে এক আরপিএফ জওয়ান আরও এক রূপান্তরকামী বোনের হাতে হাত ডলতে ডলতে বলে, আসুন না আলাদা ঘরে গিয়ে একা কথা বলি। আরও একজন ট্রান্স বোনকে বুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়।’

    প্রতিবাদে মেট্রো স্টেশনের মধ্যেই প্রতিবাদে সরব হন ওই রূপান্তরকামীরা। অবিলম্বে আরপিএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়। বন্যার দাবি, ‘প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আগে একজন যাত্রী সেজে আমি কর্তব্যরত এক আরপিএফকে জিজ্ঞাসা করি কী ঘটনা হয়েছে। উনি উত্তর দেন, ম্যাডাম কিছুই না আমার কলিগ শুধু ফিল নিতে চেয়েছিল ওর বুকটা অরিজিনাল না ফেক!’ বন্যা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই প্রতিবাদের একটি লাইভ ভিডিয়ো করেন।

    খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন রাজ্য ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য ও কেন্দ্রের গরিমা গৃহের অধিকর্তা রঞ্জিতা সিনহা। তাঁর বক্তব্য, ‘আরপিএফ কর্তৃপক্ষ থেকে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ—এত বড় অভিযোগ শোনার পর কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। আমি মেট্রো রেলের জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রকে ফোন করি। কথা বলতে বলতে উনি ফোন কেটে দেন।’ প্রতিবাদীরা জানাচ্ছেন, প্রায় মধ্যরাতে ভবানীপুর থানার আরও কিছু অফিসার রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনে আসেন। নির্যাতিতারা ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

    কৌশিক মিত্রকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘আপনার প্রশ্ন শুনে আমি খুব ভয় পাচ্ছি। এই ভাবে আমাকে কেউ প্রশ্ন করে না।’ তার পর তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টাই তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার আমাকে কেউ ফোন করেননি।’ ওই অভিযুক্ত আরপিএফ জওয়ানরা কি এখনও ডিউটি করছেন? তাঁদের হাতে কি মেট্রো রেল নিরাপদ? কৌশিকের জবাব, ‘আরপিএফ কী করছে, সেটা আমি জানি না।’
  • Link to this news (এই সময়)