কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর মুখোমুখি হওয়ার আগে এদিন রক্ষাকবচ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাটি ওঠে আদালতে। রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি এদিন এজলাসে জানান, ‘আমরা এবার হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেব। সব রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেওয়া হবে।’ হাসপাতালে কত জন রোগী ভর্তি রয়েছেন? তাও জানতে চেয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
গত বুধবার রাতে প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে আরজিকর হাসপাতালে তাণ্ডব চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর চালায় তারা। অভিযোগ, ‘ধর্ষণ ও খুনের মামলায় প্রমাণ লোপাটও এই হামলার উদ্দেশ্য হতে পারে’। যদিও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ খারিজ করেছে কলকাতা পুলিশ। এই ঘটনায় এদিন ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আরজিকর-এ ভাঙচুর রুখতে ব্যর্থ রাজ্য প্রশাসন। ৭০০০ জমায়েত কীভাবে হল? রাজ্য পুলিশ, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল না কেন? রাজ্য তার পুলিশ কর্মীদের নিরাপত্তা দিতেই ব্যর্থ হয়েছে। কেন ৭০০০ জমায়েত হল? কীভাবে তারা হাসপাতালে ঢুকে পড়ল?’
এদিনই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘আরজিকর-এর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই-এর সামনে হাজিরা দিতেই হবে।’ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঝরাস্তা থেকে সন্দীপ ঘোষকে আটক করে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। এই মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন জনস্বার্থ মামলাকারী আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীও। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ কমিশনার কী বলেছিলেন, তা এদিন আদালতে সেই ভিডিও রেকর্ডিং জমা দেন কৌস্তভ। তাঁর দাবি, “হামলার পর বিনীত গোয়েল বলছেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন রয়েছে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারছি না।’ একথা শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানিয়ে দেন, ”এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে আরজিকর বন্ধ করে রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেব।”
উল্লেখ্য, আরজিকর-এ ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন ও ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার মধ্যরাতের হামলা নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। ওই মামলাতেই এদিন রাজ্যের গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।এদিন জানতে চাওয়া হয়, “এভাবে হামলা হতে পারে, সে খবর কেন ছিল না গোয়েন্দা দফতরের কাছে? এত মানুষ জমায়েত হল, অথচ পুলিশ আগে থেকে তৈরি ছিল না? এটা বিশ্বাস করা কঠিন।” আগামী দিনে এমন ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুলিশ কী পদক্ষেপ করবে? তাও লিখিত আকারে জানতে চেয়েছে আদালত। ওই আইনজীবী বলেন,”রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা আরজকর-এ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলাম।’ এব্যাপারে রাজ্যের হলফনামা চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী বুধবার এব্যাপারে শুনানি রয়েছে।
অপরদিকে শুক্রবার আরজিকর হাসাপাতালে তাণ্ডব ও ভাঙচুরের ঘটনায় শিয়ালদা আদালতে মোট ৯ অভিযুক্তকে পেশ করা হয়। ধৃত ৯ জনকে আগামী ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ঘটনায় টালা ও উল্টোডাঙা থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এদিন উল্টোডাঙা থানার তরফে তিনজনকে পেশ করা হয় আদালতে।ধৃতদের তালিকায় রয়েছে দেবাশিস মণ্ডল, রাজু বাগ ওরফে পকাই, সুরজিৎ কর্মকার।এই তিনজন বাইরে অর্থাৎ আরজিকর হাসপাতালের বাইরে রাস্তার ওপর হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছিল বলেই পুলিশ সূত্রে প্রকাশ।
পাশাপাশি টালা থানার তরফে ৬ জনকে এদিন শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের তালিকায় রয়েছেন প্রদীপ সেন ওরফে পাপাই, শুভদীপ কুণ্ডু ওরফে সানি, ঋষিকান্ত মিশ্র, শেখ শাজান, সৌরভ দে, সৌম্যদীপ ওরফে বুম্বা। একইসঙ্গে ডে টু ডে রিপোর্ট তৈরির জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের পক্ষ থেকে। শুধু এই ৯ জনই নয়, আরজিকর-এর এই ঘটনায় স্যোশাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগ উঠেছিল অভিজিৎ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেফতার করেছে বেলেঘাটা থানার পুলিশ। এদিন তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে তোলে পুলিশ। তাঁর তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত।