এই সময়: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি সত্ত্বেও খুঁড়িয়ে হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে আরজি করের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে যে ভয়াবহ ভাঙচুরের সাক্ষী হলো জরুরি বিভাগ, তাতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডটা আক্ষরিক অর্থেই গায়েব হয়ে গিয়েছে। সেখানে না রয়েছে ডাক্তার-নার্সদের বসার জায়গা, না রয়েছে রোগীর শোওয়ার জায়গা।যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্রেরও দফারফা। পরিস্থিতি সামলাতে আপাতত ট্রমা কেয়ার সেন্টারের একতলায় অস্থায়ী ভাবে শুরু হয়েছে ইমার্জেন্সি পরিষেবা। আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে শুক্রবার থেকেই চালু হয়েছে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ। এ দিকে, আসল অপরাধী চিহ্নিতকরণের দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ফলে রোগী ভোগান্তি চলছেই।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে অশান্ত, অরাজক পরিস্থিতি সর্বত্র। কলেজে হচ্ছে না থিয়োরি, প্র্যাকটিক্যাল কিংবা বেডসাইড ক্লাস, কোনওটাই। ক্লাসের পাট লাটে ওঠায় অনেক ডাক্তারি পড়ুয়াকে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকরা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কাল থেকে এ দিন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাচ মিলিয়ে ৭৫০ এমবিবিএস পড়ুয়ার মধ্যে প্রায় ২৫০ পড়ুয়াই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন সুস্থ পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাবেন বলেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েকও মেনে নিয়েছেন, প্রায় ২০% ডাক্তারি পড়ুয়াকে ইতিমধ্যেই অভিভাবকরা বাড়ি ফেরত নিয়ে চলে গিয়েছেন বলে। শনিবার বাড়ি ফেরার আগে এমনই এক ডাক্তারি ছাত্রী বলেন, ‘এখন যা অবস্থা কলেজের, তাতে ক্লাস করার তো প্রশ্নই উঠছে না। কারণ, ক্লাস হচ্ছেই না। অযথা হস্টেলে থেকে লাভ কী!’
কলেজের ক্লাস যেমন শিকেয় উঠেছে, তেমনই প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খেয়ে খেয়ে চলছে আরজি করের আউটডোর ও ইন্ডোর পরিষেবা। আরজি কর-সহ অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা এ দিন বিকেলে জেনারেল বডি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসল অপরাধী চিহ্নিতকরণ, খুনের উদ্দেশ্য বা মোটিভ খুঁজে বের করা, ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের গ্রেপ্তারি-সহ ৯ দফা দাবি যতক্ষণ না পূরণ হবে, ততক্ষণ চলবে তাঁদের কর্মবিরতি।
তাঁরা জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি, গ্রেপ্তারি ও জিজ্ঞাসাবাদ যদি সন্তোষজনক ভাবে এগোয়, তখন তাঁরা কাজে যোগ দেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন। তবে বুধবার রাতে আরজি করে হামলার দায় কলকাতা পুলিশকে নিতে হবে বলে এবং তাঁদের আন্দোলনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুলিশকেই করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন সন্ধ্যায় এক আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু সেই সুরক্ষার পরিকল্পনাটা কেমন, তা এখনও জানানো হয়নি আমাদের। সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে বহু প্রশ্ন ঘুরছে। সেটা পুলিশকে দেখতে হবে।’ তিনি জানান, নিরাপত্তার প্রশ্নে আরজি করের বর্তমান অধ্যক্ষ সুহৃতা পালের থেকে কোনও সদুত্তর পাননি তাঁরা এবং নার্সিং স্টাফেরা। তাই এই সব দাবি না মেটা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবেই।
এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘আমরাও কাজে যোগ দিতে চাই। কিন্তু দোষীদের শাস্তি না হলে, মোটিভ না জানলে, হামলার কারণ প্রকাশ্যে না আসা পর্যন্ত সকলকে বলব, আমাদের পাশে থাকুন।’ তাঁরা আরজি করের বর্তমান অধ্যক্ষ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসকের পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং টালা থানার ওসি-রও অপসারণ চেয়েছেন।
বুধবার রাতে যে ভাবে ওয়ার্ডে সেঁধিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা, তাতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন নার্সরাও। তাঁরাও এ দিন অধ্যক্ষের কাছে সুরক্ষার দাবি জানান।