মারা যাওয়ার প্রায় ২২ বছর পর ঘুচল 'মানুষখেকো' অপবাদ, মুছল পাগলের তকমা...
আজকাল | ১৭ আগস্ট ২০২৪
অতীশ সেন: মৃত্যুর প্রায় ২২ বছর পর ঘুচল 'মানুষখেকো' অপবাদ, মুছল পাগলের তকমা। সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া হল, সে পাগল ছিল না, মানুষখেকো তো নয়ই। চোখের সামনে সন্তানকে হত্যা করার বীভৎস দৃশ্য দেখে তৈরি হওয়া আক্রোশ থেকে দু'দিনে ১৩ জন মানুষকে মেরেছিল এক মা। এর পর সেই মা'কে 'মানুষ খেকো' ও 'পাগল' আখ্যা দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অবশেষে সেই ঘটনার ২২ বছর পর বনদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হল সেদিন যা ঘটেছিল তা ঠিক হয়নি। দায়ী ছিল মানুষই। ঘটনাটি ২০০২ সালের। কার্শিয়াং ফরেস্ট ডিভিশনের বামনপোখরির জঙ্গল সংলগ্ন নিপানিয়া বনবস্তি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্ষিপ্ত হাতির হানায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়। বুনো হাতিটি মৃত এক ব্যক্তির দেহ চিবিয়ে খেয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। এরপর থেকে সেই হাতিটিকে 'মানুষখেকো' বা 'ম্যান ইটিং এলিফ্যান্ট' আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। বনদপ্তরের কর্মীরা প্রথমে মনে করেছিলেন পুরুষ হাতিটি 'রেবিসে' আক্রান্ত।
এরপর এক শিকারির সাহায্যে হাতিটিকে গুলি করে মারা হয়। পরে জানা যায়, ওই হাতিটি ছিল মাদি হাতি। সদ্য সন্তানহারা হয়েছিল হাতিটি। বনদপ্তরের কর্মীরা জানতে পারেন, ২০০২ সালের ২২ জুন হাতিদের একটি দল নেপাল থেকে মেচি নদী পেরিয়ে ভারতে আসার সময় সেখানে আটকা পড়ে। তখন নদী থেকে ট্রাক ও ট্রাক্টরে বোল্ডার তুলছিল কিছু শ্রমিক।
হাতির দলটিকে দেখে তাঁরা পাথর ছুঁড়তে থাকে। সেখানে আটকে পড়ে একটি শিশু হাতি। শ্রমিকের দল পাথর ছুঁড়ে, গাড়ি থেকে ডিজেল বের করে তা দিয়ে মশাল বানিয়ে সেই জ্বলন্ত আগুনের গোলা দিয়ে বাচ্চাটির উপর অত্যাচার করে। হাতির বাচ্চাটির সেখানেই মৃত্যু হয়। দলের সাথেই দূর থেকে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা দেখেছিল মা।
সেই ক্ষোভ থেকেই এলাকায় তাণ্ডব চালায় মা হাতিটি। পুরো ঘটনা জানার পর হাতিটির সমাধিস্থল পরিষ্কার করে তাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কার্শিয়াং ফরেস্ট ডিভিশনের ডিএফও দেবেশ পাণ্ডে। গোটা ঘটনাকে তিনি মর্মান্তিক বলে দাবি করেন। ঘটনাকি স্মরণ করে বিশ্ব হাতি দিবসের দিন হাতিটির স্মৃতিসৌধতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।