• অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই গবেষক ছাত্রীর, শেষে টনক নড়ল বিশ্বভারতীর
    বর্তমান | ১৭ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: আদালতের আইনি নোটিস আর একরোখা আন্দোলনের জেরে অবশেষে আশার আলো দেখতে পেলেন বিশ্বভারতীর নৃতত্ববিদ্যা বিভাগের ওই গবেষক ছাত্রী। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর গবেষণার প্রি-সাবমিশন রিপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে মানসিকভাবে তাঁকে হয়রানি করারও অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে তিনি অনশন আন্দোলন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। এদিকে, ১৯ আগস্ট তাঁর পিএইচডির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। হাতে মাত্র তিনদিন। এর মধ্যে প্রি-সাবমিশন রিপোর্ট না পেলে ছ’বছরের গবেষণা বৃথা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ওই ছাত্রীও হক অধিকার ছিনিয়ে আনতে নাছোড় ছিলেন। দ্বারস্থ হয়েছিলেন আদালতের। কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। পাশাপাশি ওই ছাত্রীও উপাচার্যের অফিসের সামনে অনশনও শুরু করেন। তাতেই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তড়িঘড়ি ওই ছাত্রীকে আলোচনার টেবিলে ডাকেন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাত। জানা গিয়েছে, সেখানে গিয়ে হতাশ ওই ছাত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। অসুস্থও হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে আশ্বস্ত করে কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, পিএইচডির সাবমিশনের দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। এমনটাই সূত্রের খবর। 

    ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এর আগেও নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের বহু পড়ুয়াকে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগে গবেষণার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার ওই ছাত্রী। অভিযোগ, তাঁর কথামতো না চলায় শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এতকিছু সহ্য করেও ছাত্রীটি গবেষণার কোর্সওয়ার্ক শেষ করেন। এরপর প্রি-সাবমিশন ও সাবমিশনের জন্য আবেদন করলে অনৈতিকভাবে ২১ মাস বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, অভিযুক্ত অধ্যাপক তার ফেলোশিপের এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকাও দু’বছর ধরে আটকে রাখেন। এই নিয়ে প্রতিবাদ করলে কেরিয়ার খতম করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এরপরেই ছাত্রীটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল কমপ্লেইন্স কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। তার প্রেক্ষিতেই ওই অধ্যাপক গবেষিকার প্রি-সাবমিশন রিপোর্ট আটকে রেখেছেন। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি ওই ছাত্রী গবেষণার থিসিস রিপোর্ট জমা সহ সাবমিশন ফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করেন। কিন্তু অভিযুক্ত অধ্যাপক প্রি-সাবমিশনের রিপোর্ট আটকে রাখায় ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওই গবেষিকা। নির্যাতিতা ছাত্রী বলেন, ‘সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অবশেষে আমি আদালতের দ্বারস্থ হই। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, অনশন কর্মসূচিও শুরু করেছিলাম। তার ভিত্তিতে আমাকে আলোচনা টেবিলে ডাকেন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাত। তিনি সাবমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আপাতত ভরসা রাখছি। নচেৎ নিজের কেরিয়ার বাঁচাতে বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনও পথ খোলা নেই।’ যদিও এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)