• ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত ইমার্জেন্সি বিভাগ, মিলছে চিকিত্সা পরিষেবা
    বর্তমান | ১৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এ যেন কোনও যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের হাসপাতাল। আর জি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের অন্দরের ছবিটা এই মুহূর্তে ঠিক এমনটাই। চারদিকে কাচের টুকরো। মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলি চুরমার। ওষুধপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। বাথরুমের ফাটা পাইপ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়ে থইথই করছে মেঝে। স্বাধীনতা দিবসের সকালে ছবিটা যেমন ছিল, শুক্রবারও প্রায় তেমনই। খুব একটা বদলায়নি পরিস্থিতি। তবে ইমার্জেন্সি বিভাগ স্থানান্তর হয়েছে ট্রমা কেয়ারে। সেখানে চিকিত্সা পাচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু আউটডোর সেই বন্ধই। 

    বৃহস্পতিবার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে চাকলা থেকে এসেছিলেন শ্রীনিবাস দাস। তাঁরা এ সব দেখে হতবাক। দিন বিশেক আগে চিকিৎসা শেষে আর জি কর থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন শ্রীনিবাসের মেয়ে শম্পা। তাঁর টনসিলের সমস্যা ছিল। হঠাৎ রোগ চাগাড় দেয়। বুধবার সারারাত ব্যথায় ছটফট করেছেন। আর জি কর ভাঙচুরের খবর তাঁদের জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার শ্রীনিবাস সকালবেলা হাসপাতালে আসেন। সঙ্গে ছিলেন মেয়ে, স্ত্রী ও নাতি। আউটডোর বন্ধ দেখে বললেন, ‘এখন কোথায় যাব! আমরা তো কলকাতা চিনি না। অন্য হাসপাতাল কোথায় আছে তাও জানি না।’ বৃহস্পতিবার চিকিৎসা মেলেনি এরকম অনেকের। তবে শুক্রবার ইমার্জেন্সি বিভাগ ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তর যাওয়ায় রোগীরা চিকিত্সা পেতে শুরু করেন।

    শুক্রবার বাগুইআটি থেকে এসেছিলেন জয়ন্তী রায়। বললেন, ‘আমার আজ ডাক্তার দেখানোর তারিখ ছিল। তবে ওঁরা বললেন, জানেন না এখানে ঝামেলা হচ্ছে? আমি বললাম, আজ তো দেখানোর তারিখ ছিল। তখন ডাক্তারবাবু দেখে দিলেন। আর বললেন, ঝামেলা মিটলে আর একবার দেখিয়ে যাবেন।’ হুগলি থেকে এসেছিলেন চাঁপা সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সিতে চিকিত্সা হয়েছে। কিন্তু ওপিডির চিত্রটা ছিল একেবারেই উলটো। সেখানে কোনও ডাক্তারই ছিল না। টিকিট কাউন্টারে গেলে বলা হয়, আজকে কোনও ডাক্তার নেই। শুধু এইচআইভি রোগীদের দেখা হচ্ছে।’ 

    এদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, যে ক’জন ওপিডিতে ডাক্তার দেখালেন সকলেই এইচআইভি রোগী। কাশীপুর থেকে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন আচ্ছেলাল গুপ্তা। বললেন, ‘গাইনোকোলজিস্ট দেখাব বলে এসেছিলাম। এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং ঘুরছি। কোথাও ডাক্তার নেই। কিছু করার নেই। প্রাইভেটেই দেখিয়ে নেব।’ দমদমের শ্যামলী ভৌমিকের দাদার টিবি হয়েছে। একটি ওষুধের জন্য বারাসত সরকারি হাসপাতাল থেকে আর জি করের কথা লিখে দেওয়া হয়েছিল। শ্যামলীদেবী বললেন, ‘রবিবার থেকে ঘুরছি। এই ঝামেলার মধ্যে কোথায় ওষুধ পাব বুঝতেই পারছি না।’ 

    অনেকের বক্তব্য, পড়ুয়াদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। রোগীর পরিজনরা সেই আন্দোলনকে সমর্থনও জানাচ্ছেন। তবে চিকিৎসা না পেয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে বহু মানুষকে। তাঁরা চাইছেন, পরিষেবা চালু করুন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অন্যদিকে অবস্থান মঞ্চ থেকে পড়ুয়ারা বারবার জানিয়েছেন, পরিষেবা সচল রয়েছে। সিনিয়র চিকিত্সকরা হাসপাতালের পরিষেবা সম্পূর্ণ সচল রেখেছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)