পুলিসের আধপোড়া উর্দি থেকে ধোঁয়া, মধ্যরাতে আতঙ্কের সাক্ষী থাকলেন বহু মানুষ
বর্তমান | ১৭ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বেনজির দুষ্কৃতী তাণ্ডবে আর জি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি তখন আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপ! উল্টে রয়েছে পুলিসের গাড়ি। রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে আধলা ইট, চটি। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধ। বিধ্বস্ত পুলিসকর্মীদের চোখেমুখে তখনও আতঙ্ক। পুলিসের আধপোড়া উর্দি থেকে ধোঁয়া উঠছে। হাসপাতালের সামনে থেকে সরে যাওয়া ভিড় শ্যামবাজার মোড়, টালা ব্রিজের মুখ থেকে তখনও আওয়াজ তুলছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। দু’দিকে তাড়া করে এলাকা ফাঁকা করছেন পুলিসকর্মীরা। তাণ্ডব চলাকালীন হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে পড়া চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বেরিয়ে এসে খুঁজছেন আরও নিরাপদ আশ্রয়। সবার মুখে তখন একটাই প্রশ্ন, হামলাকারীরা আবার আসবে না তো? একগুচ্ছ আধপোড়া উর্দির সামনে দাঁড়িয়ে পুলিসকর্মীর চোখে জল। বললেন, ‘দৌড়ে পাঁচতলায় চলে গিয়েছিলাম। ওয়ার্ডে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি। আমাদের হেলমেট গুলোও মেরে থেবড়ে দিয়েছে।’ তাঁর আক্ষেপ, ‘সাহেবরা আমাদের প্রতিরোধ করতে দিল না। শেষে প্রাণ বাঁচাতে আমাদেরকেই লুকিয়ে পড়তে হল।’ বুধবার মধ্যরাতে এমনই আতঙ্ক ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী রইলেন বহু মানুষ।
সেদিন মধ্যরাতের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আচমকাই হিংস্র হয়ে ওঠে। ইমার্জেন্সির সামনের গেটে থাকা পুলিসকর্মীদের লক্ষ্য করে জুতো ও জলের বোতল ছোড়া শুরু হয়। তারমধ্যে হঠাৎ কিছু লোক হাসপাতালের গেটের সামনে দেওয়া ব্যরিকেড ভাঙতে শুরু করে। জনতার তাড়া খেয়ে পুলিস পিছু হটতেই পিলপিল করে ভিতরে ঢুকে পড়ে বহু লোক। শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর। জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চ তছনছ করে দেওয়া হয়। রাত দেড়টা নাগাদ কার্যত গোটা বিটি রোড অবরুদ্ধ। জায়গায় জায়গায় ‘রাত দখল’ কর্মসূচির বিশাল বিশাল জমায়েত। তার মধ্যে টালা ব্রিজ থেকে আর জি করে ঢোকার রাস্তায় মারমুখী জনতার হাতে ইট ও লাঠি। পুলিস মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়ে চলেছে। মুখ ঢেকে পুলিসের দিকে তেড়ে গেল একদল যুবক। মহিলা পুলিস ভর্তি বাস আটকে দেওয়া হয়েছে টালা ব্রিজের মুখেই। বাসের চাকা এগলেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পাশের রাস্তায় বিচারের আওয়াজ তোলা পিয়ালি সাউরা থমকে দাঁড়ালেন। চিৎকার করে বললেন, ‘এই পুলিসের গাড়িতে হামলা করিস না। তোরা তো আমাদের সঙ্গে ছিলি না। তোরাই কিন্তু ঝামেলা করছিস।’ প্রতিবাদী জনতার এই চিৎকার কানে তুলল না সেই উন্মত্ত বাহিনী। অবশেষে বিশাল পুলিস বাহিনী তাড়া করলে আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়ল তারা। হাসপাতালের সামনের রাস্তা তখন পুরোপুরি শুনশান। ততক্ষণে বিধ্বস্ত পুলিসকর্মীদের মধ্যে এসে হাজির হয়েছেন কলকাতার পুলিস কমিশনার।